পাবলিক পরীক্ষার সময়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ থাকে। তবে এবার ভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেও এবার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এক চিঠিতে সব পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ জুন এইচএসসি পরীক্ষা-২০২৪ শুরু হচ্ছে। সেসব কেন্দ্রে স্কুল ও কলেজ একসঙ্গে রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শ্রেণি কার্যক্রম পরীক্ষার দিনগুলোতে পরীক্ষা শেষে এবং যেদিন পরীক্ষা নেই, সেদিন চলমান রাখার জন্য বলা হলো। আগামী ৩০ জুন থেকে এইচএসসি ও সমামানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে নির্দেশনা এটাও বলা হয়েছে যে, শ্রেণি কার্যক্রম চলমান রাখতে পাবলিক পরীক্ষায় যেন বিঘœ সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
তবে পরীক্ষার দিন অন্যান্য শ্রেণির পাঠদান চালু নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০। ২ হাজার ৭২৫টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০ টায় এবং শেষ হবে বেলা ১ টায়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে অভিভাবকদের ব্যাপক জটলা থাকে। পরীক্ষা শেষ হবার পর শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র ছাড়তে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগবে। সে কারণে বেলা ২ টার আগে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনির ক্লাস শুরু করা যাবে না। আবার যেসব শিক্ষক ১০ টা থেকে পরীক্ষার সময় হলের দায়িত্বে থাকবেন তাদের ৯ টার মধ্যে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হয়।
শিক্ষকদের প্রশ্ন, ৯ টা থেকে ২টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘন্টা দাড়িয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন শেষে এইসব শিক্ষকদের আবার ২ টা থেকে পাঠদান করানো কিভাবে সম্ভব ? এটা কষ্টসাধ্য ও অমানবিকও।
শিক্ষকরা বলছেন, একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের হলগুলোতে দায়িত্ব পালনের যত সংখ্যক শিক্ষক দরকার, তা
পালন করা একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক দিয়ে সম্ভব হয়। অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও প্রয়োজন হয়। ফলে কোন শিক্ষককে পরীক্ষার দায়িত্বে না রেখে তাদের দিয়ে পাঠদানেরও সুযোগ নেই।
শিক্ষকরা মনে করে, যেদিন পরীক্ষা থাকবে শুধু সেদিন পাঠদান বন্ধ রেখে অন্যান্য দিন পাঠদান চালু থাকতে পারে।
তবে পরীক্ষার সময় যাতে পাঠদান বন্ধ না থাকে সার্বিক বিষয়ে বিবেচনায় ২০১৭ সালে ডিসি সম্মেলনে প্রত্যেক উপজেলায় আলাদা পরীক্ষাকেন্দ্র করার সুপারিশ করেছিল জেলা প্রশাসকরা। এই প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে পরের বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মহিউদ্দিন খানের সভাপতিত্ব মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি সভা হয়। আর প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্বতন্ত্র পরীক্ষাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্পে সম্ভাব্যতা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অবকাঠামো, কতগুলো কেন্দ্রে ও ভেন্যুতে পরীক্ষা নেওয়া হয় এসব বিষয় পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এর পর আর এগোয়নি।
তবে শিক্ষক ও অভিভাবকরা ২০১৭ সালের প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।