ছয় দফা আন্দোলনের মঞ্চসজ্জা থেকে মুক্তিসংগ্রামের পোস্টার, পাঠ্যবইয়ের অলংকরণ, অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদসহ ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে জড়িয়ে আছে বরেণ্য শিল্পী হাশেম খানের কাজ। জীবনের শুরু থেকেই তিনি দেশ ও মানুষের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাঁর সমস্ত শিল্পকর্মেও উঠে এসেছে সেই দর্শন।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে এইচএসবিসি ব্যাংক আয়োজিত ‘সৃজন গুণীন হাশেম খান’ শিরোনামের আয়োজনে ‘চিত্রকলা ভাস্কর্য ম্যুরাল ও ড্রইং ১৯৫৬-২০২৩’ শীর্ষক অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে শিল্পী হাশেম খানের আঁকা ছবি থেকে বাছাই করা ২২০টি ছবি নিয়ে সাজানো অ্যালবামটির পরিবেশক জার্নিম্যান বুকস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এইচএসবিসি নির্মিত শিল্পী হাশেম খানের কাজ ও ভাবনা নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, শিল্পী হাশেম খান বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে জড়িয়ে আছেন তার প্রতিটি কাজেই দেশের ছায়া প্রতিভাত হয়েছে।
মফিদুল হক বলেন, জলরঙের কাজে পিছিয়ে পড়েছিল এ দেশ। তবে হাশেম খান ও রফিকুন নবীর কাজ সে শূন্যতা পূরণ করেছে। ছয় দফা আন্দোলনের সময় মঞ্চসজ্জায় হাশেম খানের নেতৃত্বে অসাধারণ কাজ সব কাজ আমাদের উপহার দিয়েছেন। তার সেইসব শিল্প অভিযাত্রার একটি প্রয়াস এই প্রকাশনা।
লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, প্রগতিচিন্তার একজন নিরলস সাধক হাশেম খান। তার ছবিতে একই সঙ্গে দেখা যায় রুদ্ধ ও মুক্ত হওয়ার অনুভবের কথা।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হাশেম খানের জীবনের বড় দর্শন ছিল তিনি শুরু থেকেই দেশ ও মানুষের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাঁর সমস্ত শিল্পকর্মেও উঠে এসেছে সে দর্শন। নানা সংকটের মধ্যেও তাঁকে দেখেছি অবিচল থাকতে।
শিল্পী হাশেম খান বলেন, ছবি আঁকাটাই আমার কাজ। ১৯৫৬ থেকে ২০২৩ এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিদিনই ছবি এঁকেছি। এর মধ্য দিয়ে আমি স্বপ্নের বাংলাদেশকে আঁকি।
মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অধ্যায় ধরা রয়েছে হাশেম খানের চিত্রে। বাংলাদেশকে জানতে হলে হাশেম খানকে জানতে হবে।
নাহিদ ইজহার খান বলেন, আমাদের শৈশবে নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষার অন্যতম আগ্রহে থাকত শিল্পী হাশেম খানের আঁকা ছবি। তিনি আঁকা ছবি দিয়ে আমাদের শিশুমনে ষড় ঋতুকে চেনাতেন।
আয়োজনের শেষে ছিল রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অদিতি মহসিনের কণ্ঠে সংগীত পরিবেশনা।