ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নেপালে গ্রেফতার হওয়া মো. সিয়াম হোসেনকে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কলকাতার একটি আদালত। গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে হাজির করা হলে আদালত এই আদেশ দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, যেহেতু এমপি আনারকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করা লাশের খন্ডিতাংশ গুম করার দায়িত্বে ছিলেন সিয়াম, সেহেতু তার দেয়া তথ্যে মরদেহের কিছু অংশ হলেও পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবদে বাংলাদেশের ডিবি পুলিশের টিম আবারো কলকাতা যেতে পারে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারন অর রশীদ। গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। তিনি আরো জানান, আনার হত্যাকান্ডের বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তাকে এখনও গ্রেফতার দেখানো হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে যদি তার কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তবে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। আর সম্পৃক্ততা না পেলে ছেড়ে দেয়া হবে।
এদিকে সিয়ামকে কলকাতা সিআইডি নেপাল থেকে ফিরিয়ে আনার পর মামলাটি ওঠে আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক সংগীতা লেট-এর এজলাসে। বিচারক সিআইডি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান, আসামিকে কত দিনের হেফাজতে চাইছেন তারা। জবাবে সিআইডি জানায়, ১৪ দিনের হেফাজত দিলে তাদের তদন্তে অগ্রগতি আসবে। এ কথা শুনে সিয়ামকে ১৪ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। সিয়ামের রিমান্ডের ব্যাপারে বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মন্দাক্রান্তা মুখার্জি জানান, এমপি আনারের মরদেহের টুকরোর সন্ধান, হত্যায় কী কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলো উদ্ধারসহ তদন্তে গতি আনতেই সিয়ামকে ১৪ দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল সিআইডি। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। সিয়ামের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ধারা যুক্ত করা হবে।
গতকাল ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারন অর রশীদ বলেন, আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডে যে বা যারাই জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে সিয়ামকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারো ভারতে যাবে ডিবি।
আনারের শরীরের উদ্ধার করা মাংসের ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য এমপির পরিবারের সদস্যরা খুব দ্রæত ভারতে যাবেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া ভারতের তদন্ত কর্মকর্তারাও পরিবারের সদস্যদের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়েছে। শিগগির তারা ডাকবে। যদি তারা ডাকে তবে ধরে নিতে হবে ডিএনএ টেস্টের জন্য ডেকেছে। বাংলাদেশের সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা করা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু হয় নাই আর প্রশ্নও উঠেছে সেখানে যাচ্ছে। আমি মনে করি সেখানে গেলে কম সময়ের ভেতরে হয়ে যাবে।
মূলহোতা আখতারুজ্জামান শাহীনকে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহীন নেপাল থেকে দুবাই হয়ে আমেরিকা চলে গেছে। ভারতে যখন ছিলাম সেখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে, বৈঠক হয়েছে। যেহেতু ভারতে হত্যা হয়েছে সেহেতু শাহীন তাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। আমরাও কাজ করছি তারাও কাজ করছে। আমরা পুলিশ সদরদপ্তরের এনসিবি’তে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারা হয়তো ইন্টারপোলের কাছে এসব বিষয় জানিয়েছে। বাংলাদেশের অ্যাম্বাসির সঙ্গে আমরা কথা বলছি। তবে এইটুকু বলতে পারি আনার হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা যেখানে যেভাবে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সিয়ামকে ভারত নিয়ে গেছে। আনারকে হত্যা করে পৈশাচিক কায়দায় গুম করার বিষয়টি জানে সিয়াম ও জিয়াদ। এ দুজনই এখন তাদের কাছে রয়েছে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে ভালো ফল পাবে।
তিনি বলেন, দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা পারস্পরিক সহযোগীতার মাধ্যমে কাজ করার কারণে ভালো ফলাফল আসছে। আমরা যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। তারাও দায় স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে গ্রেফতার আসামিদের কি ভারত নিয়ে যেতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কথা বলতে হবে। আমরা আগেও যখন ভারত গিয়েছিলাম তখন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলাম।
জানা গেছে, এমপি আনার হত্যা মামলায় সিয়াম ছাড়াও আরও পাঁচজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান। ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন জিহাদ ও আরেকজন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার ভারতীয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বরানগর স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। এরপর গত ২২ মে কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে তার খুন হওয়ার বিষয়টি জানায় ভারতীয় পুলিশ।