সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার পোরজনা ইউনিয়নের হরিনাথপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক হারুন-অর-রশীদ খান (৩৬) হত্যার ঘটনায় আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গ্রেফতার করছে না বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। গত ২৪ মে রাত ৮ টার দিকে হরিনাথপুর গ্রামে ৩০/৩৫ জন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে। নিহত হারুন-অর-রশিদ পাবনার আমিনপুরের রতনগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন।
পুলিশ বলছে, স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়াকে কেন্দ্র করে তার সাবেক শ্বশুর ফকরুল মোল্লা দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা গাজী মোঃ আলাউদ্দিন আলো বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় পুলিশ বাশার, মোখলেছুর ও আলমগীর নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে মামলার মূল আসামীরা এখনও গ্রেফতার হয়নি।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহতের সাবেক স্ত্রী রেখা বেগম শাপলার বাড়ি শাহজাদপুর থানার পোরজনা ইউনিয়নের বড়মহারাজপুর গ্রামে। তাদের সংসারে ৪ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। বছরখানেক আগে তার স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্কের বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে শালিস বসে। তিন মাস আগে হারুন-অর-রশীদ তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। এর জের ধরে সাবেক স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায়ই তাকে হুমকি দেয়া হত।
গত ২৪ মে রাত ৮ টার দিকে শিক্ষক হারুন-অর-রশীদ ঔষধ কিনতে বাড়ি থেকে পোরজনা বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তার শ্বশুর ফখরুল মোল্লা ও চাচা শ্বশুর মুকুল মোল্লার নেতৃত্বে তাদের সহযোগীরা লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হারুনকে তুলে নিয়ে যায়। পোরজনা এমএন উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে নির্জন স্থানে পিটিয়ে ও কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। পরে তাকে শাহজাদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার বাদি গাজী আলাউদ্দিন আলো জানান, স্ত্রীকে তালাক দেয়ার কারনেই পরিকল্পিতভাবে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার ছেলেকে হত্যা করেছে।
নিহতের চাচা রেজাউর রশিদ খান অভিযোগ করেন, ঘটনার পর ২ জুন এলাকাবাসী ও নিহতের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এলাকাবাসীরা খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার। তবে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রধান আসামীদের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আমরা এই মামলায় আরো ১১ জনকে আসামীর তালিকায় দেয়ার জন্য আদালতে উপস্থাপন করেছি। ওই ১১ জনের মধ্যে হাশেম আলী মেম্বার খুনীদের পক্ষ নিয়ে সমঝোতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। অজ্ঞাত নম্বর থেকে মাঝে মধ্যে ফোন করে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে শাহাজাদপুর থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, এই মামলায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। মামলা তুলে নিতে বা খুনীদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাবের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আসামীদের সব মোবাইল ফোন বন্ধ। ভিকটিমের পরিবারকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে আসামীরা ফোন দিলে, ওই ফোন নম্বর পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ফোন নম্বর ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে দেয়া হয়নি। হুমকি দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।