spot_img

লিবিয়ায় নাটোরের চার যুবক অপহরণ, মুক্তিপণ চেয়ে নির্যাতন

নাটোরের চাসন্তানকে বিদেশ পাঠাতে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন। সেই ঋণ এখনো শোধ হয়নি। এরই মধ্যে খবর এসেছে লিবিয়ায় জিম্মি হয়েছেন কলিজার টুকরা সন্তান। মুক্তিপণ আদায়ে পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও। সেই ভিডিওতে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে পিতা-মাতাকে টাকা পাঠাতে বলছেন সোহান (২৫)। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলের জিম্মিদশার কথা জানাচ্ছিলেন সোহানের পিতা শাহজাহান প্রামাণিক। সোহানের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিয়াঘাট বাবলাতলা গ্রামে। সোহানের সঙ্গে জিম্মি হয়েছেন একই গ্রামের আরো দুই যুবক মো. সাগর হোসেন (২৪), নাজিম আলী (৩২) ও নাজিরপুর ইউনিয়নের হামলাইকোল গ্রামের মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬)।
গোয়ালের গরু, চাষের জমি বন্ধক আর চড়া সুদে মহাজনী ঋণ এবং এনজিও থেকে কিস্তি তুলে এই চার যুবককে লিবিয়ায় পাঠিয়েছে তাদের পরিবার। কিন্তু সেখানে গিয়ে স্বদেশিদের হাতেই জিম্মি হয়েছেন গুরুদাসপুরের চার যুবক। এখন জিম্মি ব্যক্তিদের প্রাণে বেঁচে থাকা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পরিবারের লোকজন।
লিবিয়ায় জিম্মি হওয়া চার যুবকের পরিবার জানিয়েছে, বছর দুয়েক আগে এই চার যুবক লিবিয়ায় পারি জমান। প্রতিমাসে অন্তত ২০ হাজার করে টাকা পাঠাতেন তারা। কিন্তু গত রোববার (২ জুন) রাতে ওই চার যুবকের ইমু নম্বর থেকে পরিবারের কাছে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। এরপর জিম্মি ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিবারের কাছে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হবে, প্রাণে মেরে ফেলা হবে। সন্তানদের এমন প্রাণসংশয় থাকায় বিষয়টি পুলিশকে এখনো জানাননি চার পরিবারের লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়াঘাট বাবতলা গ্রামের শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে মো. সোহান প্রামাণিক (২৫), মো. তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪), মৃত শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩১) ও হামলাইকোল গ্রামের এনামুল হকের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৭) ভাগ্য বদলাতে লিবিয়ায় যান দুই বছর আগে। এদের মধ্যে বিদ্যুৎ হোসেনের পিতা এনামুল হক এখনো লিবিয়াতেই আছেন। মূলত তার মাধ্যমেই তার ছেলে বিদ্যুৎসহ চার যুবক লিবিয়ায় গেছেন। লিবিয়ায় জিম্মিদশায় পড়ার পর থেকে অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সাথে এনামুল হক ঠিকমতো যোগাযোগ রক্ষা করছেন না। উপরন্ত হামলাইকোল গ্রামে থাকা এনামুলের স্ত্রী সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধ জানান। তবে এ ব্যাপারে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।

লিবিয়ায় জিম্মিদশায় পড়া যুবক সোহানের পিতা শাহজাহান আলী বলেন, ‘‘রোববার ইমু নম্বরে কল দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ছেলে সোহান বলছিলেন, ‘মা বাঁচাও, বাবা বাঁচাও। কারা যেন আমাকে অপহরণ করেছে। অপহরণকারীরা বাংলায় কথা বলছেন। ১০ লাখ টাকা না দিলে মেরে ফেলবে। এবারের মত আমাকে বাঁচিয়ে আমার জীবন ভিক্ষা দাও মা’।’’
তিনি বলেন, ‘বাড়ির ভিটে ছাড়া কোনো জমাজমি নেই। ভিটে বিক্রি করলেও দশ লাখ টাকা হবে না। ছেলেকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।’
আরেক জিম্মি নাজিমের স্ত্রী নাদিরা বেগম জানান, অপহরণকারীরা তার স্বামীকে ছেড়ে দিতে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছেন। তিনি স্বামীকে মুক্ত করতে টাকার যোগান দিতে পারছেন না। এজন্য প্রায়ই মোবাইল ফোনে নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছেন অপহরণকারীরা। দুই সন্তান আর বৃদ্ধ শশুর শাশুড়ি নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন। তিনি জানেন না কার সহযোহিতা পেলে স্বামী উদ্ধার হবে।
জিম্মি যুবক সাগরের বিধবা মা ছকেরা বেওয়া জানান, অনেক কষ্টে ঋণ করে সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। এখন আবার ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছেলেকে ছাড়াতে হবে। তিনি টিআর-কাবিটা প্রকল্পের নারী শ্রমিক। তার পক্ষে মুক্তিপণের টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়। অপহরণ আর মুক্তিপণের বিষয়ে মুখ খুললে সন্তানকে মেরে ফেলা হবে একারণে অপহরণের শিকার বিদ্যুতের মা কোনো মন্তব্য করেননি।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান সুজা জানান, ঘটনাটি শোনার পর জিম্মিদের উদ্ধারে তিনি দ্রুত সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার জানান, ‘লিবিয়ায় জিম্মি চার যুবককে উদ্ধারের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছেন তারা। এছাড়া জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারে গিয়ে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ