ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় আসামি সিয়ামকে ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে নেপাল পুলিশ। আটককৃত সিয়াম বর্তমানে কলকাতা সিআইডি’র হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে আনার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক গ্যাস বাবুকে আটক করে ডিবি পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার অন্যতম হোতা শিমুল ভ‚ঁইয়ার আত্মীয় কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে। নেপাল পুলিশ সিয়ামকে কলাকাতার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আটককৃত সিয়াম বর্তমানে কলকাতা সিআইডি’র হেফাজতে রয়েছে। কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সিয়ামকে হত্যাকান্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়া কলকাতা সিআইডির কাছে এই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে আরো দুজন গ্রেফতার রয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, যেখানে ঘটনা সংঘটিত হয় সেখানে তদন্ত হয়। এটি একটি সেট রুল। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের আইনে আছে, বিদেশে যদি কোনো বাংলাদেশি অপরাধ করে থাকে সেই অপরাধীকে বাংলাদেশে এনেও বিচার করতে পারি। তিনি বলেন, এ ঘটনা ভারতও তদন্ত করছে, বাংলাদেশ পুলিশও তদন্ত করছে। তদন্তের বিষয়ে দুই দেশ একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।
ডিএমপি সূত্র বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আখতারুজ্জামান শাহীন নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। বাড়ি ঝিনাইদহে হলেও তিনি যুক্তরষ্ট্রের নাগরিক। আর শাহীনের সহযোগী সিয়ামও হত্যাকান্ডের পর কাঠমান্ডু গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেই খবর পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার মাধ্যমে নেপালের পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়। ঢাকার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিয়ামকে আটক করে কাঠমান্ডুর পুলিশ।
কলকাতা সিআইডি সূত্র বলছে, এই খুনের মামলার মূল অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনের খোঁজ চলছে। অনুমান, শাহিন কলকাতা থেকে নেপাল হয়ে আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছেন। তিনি আমেরিকারই বাসিন্দা। তাই তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আমেরিকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করা হয়েছে। সেই শাহিনেরই অন্যতম প্রধান সহযোগী সিয়াম, কসাই জিহাদকে নিয়ে কয়েক মাস ধরে চিনার পার্কে ফ্ল্যাটেই ছিলেন। এই ফ্ল্যাটটি ছিল শাহিনের নামেই। ২০১৮ সালে এই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন শাহিন। এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের পরিকল্পনা কার্যকর করার বিভিন্ন ধাপে সিয়ামের কার্যকর ভ‚মিকা ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক গ্যাস বাবুকে আটক করে ডিবি পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার অন্যতম হোতা শিমুল ভ‚ঁইয়ার আত্মীয় কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু।
ইত্তেফাক এর ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসা থেকে গত বৃহষ্পতিবার রাতে কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে ডিবি’র একটি টিম আটক করেছে। কাজী কামাল আহমেদ বাবু ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যান সম্পাদক। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মোঃ শাহীন উদ্দিন বলেন, ঢাকা থেকে আসা ডিবি’র একটি টিম তাকে বাসা থেকে আটক করে ঢাকা নিয়ে গেছে। কেন বা কোন মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে তা বলতে পারবো না। তবে ওসি আরো জানান, গত বুধবার কাজী কামাল আহমেদ বাবুর ৩টি মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। এব্যাপারে সদর থানাতে একটি জিডি করা হয়েছে।
জানা গেছে, এমপি আনার হত্যা মামলায় সিয়াম ছাড়াও আরও পাঁচজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান। ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন জিহাদ ও আরেকজন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার ভারতীয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বরানগর স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। এরপর গত ২২ মে কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে তার খুন হওয়ার বিষয়টি জানায় ভারতীয় পুলিশ।