spot_img

৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন

আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে এবার বাজেটে ছাড় কমানোর প্রস্তাব করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রস্তাবিত বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ হতে নি¤œ আয়ের মানুষের সুরক্ষা কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি। দেশীয় শিল্প সুরক্ষার কথাও বলেছেন। কিন্তু শিল্প খাতে দেওয়া সুবিধা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন তিনি। রাজস্ব আদায় বাড়তে রেয়াতি হারে ভ্যাট এবার কিছু খাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের এই ছাড় কমে যাচ্ছে। আগে শুণ্য শুল্ক থাকলেও শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে শুণ্য শুল্ক সুবিধা থাকছে না। এসব অঞ্চলে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতে আবগারি শুল্পহার পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকের টাকায় কিছু ক্ষেত্রে গুণতে হবে বাড়তি কর। নিত্য ব্যবহারকারী কিছু পণ্যে খরচ বাড়বে যেমন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার। আইসক্রিমে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। কোমল পনীয় খাতেও খরচ বাড়বে। সাধারন মানুষের বিনোদনের জন্য দ্বিগুণ করা হয়েছে ভ্যাট। স্থানীয় পর্যায়ে ফ্রিজ, এসি উৎপাদনে ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ এই খাতেও ছাড় তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করলেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট তুলে দিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাবে খরচ বাড়বে যান্ত্রিক লন্ড্রি সেবায়, সিকিউরিটি সেবা, নিলামকারী সংস্থার। দেশের ট্যুর অপারেটর সেবা এতদিন ভ্যাট অব্যহতি পেলেও এবার সেই সুবিধা তুলে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল বিশেষ শুল্কছাড়ে চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পেত। হার ছিল ১ শতাংশ। বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে চিকিৎসাসেবা মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে হাসপাতালগুলো। উচ্চমূল্যস্ফীতির এই সময়ে করমুক্ত আয় সীমা বৃদ্ধি হয়নি। উচ্চ আয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কর ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশ ছিল। পরে এটি কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এবার সেই কর হার আগের জায়গায় নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ উচ্চ আয়ের কর ছাড়ের সুবিধা কমিয়ে আনলেন অর্থমন্ত্রী। এবার ছাড় কমানোর প্রস্তাবে বাদ যাননি সংসদ সদ্যরাও। সকল স্তরে শুল্ক-কর প্রদানের সংস্কৃতি চালু করার জন্য সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক গাড়ী আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কর অব্যাহতির সুবিধা সংক্রান্ত বিধানটি পরিবর্তন করার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটের আকার: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিকাল ৩ টা থেকে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেট বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। এবার বাজেট বক্তৃতাকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করেন তিনি। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে চার দশমিক ছয় শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪শ কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের পর বিকেলে অর্থমন্ত্রী জাতীয় বাজেট সংসদে উত্থাপন করেন।
আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশেধে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫শ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় হলেও বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকবে নতুন বাজেটে। ঘাটতি মেটাতে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা থাকছে। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক থেকে নিতে চায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে চায় ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেটে অর্থের জোগান দিতে সরকারকে এখন আগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ঋণ পরিশোধের চাপ। পাশাপাশি ডলার-সংকট ও ডলারের বাড়তি দাম সরকারকে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও বেশি চাপে ফেলেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশে বেধে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ