ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভ‚ঁইয়া ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভ‚ঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল ওরফে শিহাব। গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। আদালত সূত্র জানিয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন শিমূল ভ‚ঁইয়া। বিশেষ করে সঞ্জীভা গার্ডেনকেই কেন ভাড়া করা হলো, কিভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সদস্যদের যুক্ত করা হয়, শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করা, লাশ গুমের বর্ণনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত শতভাগ বলতে পারবো না সঞ্জীবা গার্ডেনে উদ্ধার হওয়া মাংসই এমপি আনারের মরদেহের খÐাংশ। গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমপি আনারকে ভারতে হত্যা করা হয়েছে। আপনারাও শুনেছেন, আমরাও শুনেছি ভারতে মরদেহের খÐিত অংশ পাওয়া গেছে। এই নৃশংস হত্যাকাÐ যারা ঘটিয়েছেন তারা আমাদের কাছে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাদের কয়েকজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে। ভারত চাইবে অপরাধী তার দেশে নিয়ে যেতে। ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। ভারত যখন সিয়ামকে নেবে তখন আমরাও বলবো আমাদেরও কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে। দুই দেশ মিলেই তদন্ত হচ্ছে। আশা করি দুই দেশ মিলেই তদন্তে একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত আসবে।
শিমুল ভ‚ঁইয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছে, ৩০ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছান ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন। তার সঙ্গে কলকাতায় যান সেলেস্টি রহমান ও শিমুল ভ‚ঁইয়া। তারা গিয়ে আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে (সঞ্জীবা গার্ডেন) ওঠেন। ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন শিমুলের ভাতিজা তানভীর, তাদের সহযোগী জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী। খুনের আগে কলকাতায় নিউমার্কেট থেকে পলিথিন, চেয়ারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়েছিলো। তাদের পরিকল্পনা ছিলো প্রথমে চেয়ারে বেধে এমপি আনারের অশ্লীল ভিডিও ধারন করে বøাকমেইলের মাধ্যমে টাকা হাতানোর পর খুন করা। কিন্তু চেতনাশক বেশি প্রয়োগ করে ফেলায় সেই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। ১৩ মে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে মাংস ও হাড় আলাদা করার কথা স্বীকারও করেছেন শিমুল। লাশ গুম করতে মাংসের টুকরো দুইটি টয়লেটের কমোড দিয়ে ফ্লাশ করা হয়। আর হাড় হাতিশাল খালে ফেলা হয়েছে। খুনের আগেই মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান ঢাকায় চলে আসেন বলেও জানিয়েছেন শিমুল।
গতকাল দুপুরের দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসি মাহফুজুর রহমান আসামি শিমুলকে আদালতে হাজির করেন। তিনি এক আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এমপি আনারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। তিনি আদালতেও দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক। পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জানা গেছে, শিমুল ভ‚ঁইয়া খুলনা জেলার ফুলতলা থানার দামোদর গ্রামের ভ‚ঁইয়া বাড়ির নাসির উদ্দিন ভ‚ঁইয়ার ছেলে। এর আগে গত সোমবার এই মামলায় গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত মঙ্গলবার আমান ভ‚ঁইয়ার ভাতিজা তানভীর ভ‚ঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
উল্লেখ্য এমপি আনার ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জীবাা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে তিনি খুন হন। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এ তথ্য জানায়। এরপর শিমুল ভ‚ঁইয়াসহ ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা এবং তার লাশ গুম করার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ।