প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণ ও দেশের উন্নয়নে সর্বদা আন্তরিকভাবে নিবেদিত। আমরা আপনাদের পাশে আছি, ঘ‚র্ণিঝড় রিমালের আঘাতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করবো। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যতদিন সহযোগিতার প্রয়োজন হবে ততদিন সরকার ও আওয়ামী লীগ তাদের পাশে থাকবে। দুর্যোগ মোকাবেলা করে জীবনমান রক্ষা করবো।
গতকাল বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজিত কলাপাড়ায় সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি রীতিমতো জনসভায় রূপ নেয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার থেকে পটুয়াখালী জেলার মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা এলাকায় ঘ‚র্ণিঝড় রিমেলের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র পরিদর্শন করেছেন। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে হেলিকপ্টারটি যখন ধীর গতিতে অনেক নীচু দিয়ে উড়ছিল তখন তিনি সুপার স্টর্ম রিমেল-আক্রান্ত দু’টি এলাকা প্রত্যক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারি হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর গতকাল দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী এখানে সরকারি মোজাহারউদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজে ঘ‚র্ণিঝড় দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। এরপর তিনি পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের শহীদ শেখ কামাল সেতু পরিদর্শন করেন এবং পরে তাঁর বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা রয়েছে। শেখ হাসিনার পটুয়াখালী সফরকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। অনুষ্ঠান শেষে তিনি শেখ কামাল সেতু পরিদর্শন করে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কনফারেন্স রুমে বরিশাল বিভাগীয় উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। বিকাল ৩টায় তিনি পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের হেলিপ্যাড থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘ‚র্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাঁধ দ্রæত পুনর্গঠনে সরকার কাজ করছে। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, ইতিমধ্যে আমরা খোঁজ নিতে বলেছি। তাছাড়া আমি আবার সবার সঙ্গে বসব, যাতে যেখানে যেখানে যাদের বাড়িঘর ভেঙেছে, তাদের ঘরবাড়ি করে দেব; এইটুকু ভরসা আপনারা রাখবেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এইসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক লোকই তো ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু তারা এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ¡াস প্রকৃতির নিয়মেই আসে। সেখানে মানুষের জীবন মান বাঁচানোই সবচেয়ে বড় কথা। জিনিস গেলে পাওয়া যায়, কিন্তু জীবন তো আর পাওয়া যায় না। তিনি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ প্রদানে জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আজ দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। আমরা রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ নির্মাণ করে আপনাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা সব করে দিয়েছি। এখন ৬/৭ ঘন্টার মধ্যেই সড়কপথে কলাপাড়া আসা যায়। ঘুর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে এবারে খুবই অস্বাভাবিক জলোচ্ছ¡াস হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ তাঁদের করে দেওয়া সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় পেয়েছে। তিনি দুর্যোগ সহনীয় ঘর-বাড়ি দরিদ্রদের মধ্যে বিনাম‚ল্যে বিতরণ করেছেন। যে কারণে মানুষ ও পশু-পাখি আশ্রয়ের জায়গা পেয়েছে। তাঁর সরকার চায় এই এলাকার মানুষ যেন দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায় কারণ এই এলাকা সবসময়ই দুর্যোগ প্রবণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। যাতে বর্ষার আগেই এগুলো পুনর্র্নিমাণ করে মানুষকে জলোচ্ছাস বা পানির হাত থেকে বাঁচাতে পারা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিনি প্রশাসনের সঙ্গে বসে হিসাব নিরুপন করে যেখানে যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে গেছে সেগুলোও সংস্কারের পদক্ষেপ তিনি নেবেন এবং ধানকাটা শেষ হয়ে গেলেও তরিতরকারি ও খেতের ফসল যা নষ্ট হয়েছে কৃষকরা যেন নতুন উদ্যমে আবার চাষাবাদ করতে পারেন সে জন্য বীজ ও সার প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়ার আশ^াস দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ, মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য যা যা দরকার আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ যেন না খেতে পেয়ে কষ্ট না পায় এইজন্য তাদের সার্বিক উন্নতিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
কোলাপাড়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাফিজ মল্লিক, যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, মোসা: শাম্মি আখতার এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান প্রমুখ। এর আগে এই এলাকার ঘ‚র্ণিঝড় রিমেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই অঞ্চলে সেনানিবাস ও নৌবাহিনী ঘাঁটি, পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলেই এই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এরআগে অনেকে সরকারে থাকলেও কেউ এদিকে দৃষ্টি দেয়নি। তিনি বলেন, এই অঞ্চল অবহেলিত ছিল। এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃিতর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে কিন্তু সেটাকে মোকাবিলা করে মানুষের জীবন-মান রক্ষা করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য এবং সেই কাজই তাঁরা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে নি:স্ব-রিক্ত তিনি জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কারণ, তাঁর বাবা এই দেশের মানুষের জন্যই সারাজীবন কষ্ট করেছেন। এই দেশের জনগণের ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আজ তাঁরা বাংলাদেশ ডিজিটাল করেছেন আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ‘উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলবেন। যুব সমাজের মাঝে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ প্রদান, স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম, ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেকারের সংখ্যা এখন মাত্র ৩ ভাগ। ইনশাল্লাহ সেটাও থাকবে না। তবে, নিজেকে উদ্যোক্তা হতে হবে এবং কেবল চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ও পটুয়াখালী সদর আসনের এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।