spot_img

চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়ার সেকেন্ড ইন কমান্ড সাইফুল মেম্বার যশোরে আটক

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় আলোচিত শীর্ষ চরমপন্থী নেতা শিমুল ভুঁইয়ার সেকেন্ড ইন কমান্ড ও পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বারকে মঙ্গলবার রাতে আটক করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। শহরের চাঁচড়া বাবলাতলার একটি মৎস্য হ্যাচারির ভেতর থেকে তাকে আটক করা হয়। সাইফুল চোরাইপখে ভারতে পলাতক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম। আনার হত্যার সময় তিনি ভারতে উপস্থিত ছিলেন বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন। গত ১৯ মে তিনি ভারত থেকে যশোরে ফেরেন। তার কাছ থেকে ভারতীয় সিম জব্দ করা হয়েছে। তবে আটক সাইফুল ইসলাম তার কাছের ভারতীয় সিম দিয়ে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ছুটিপুর সীমান্ত এলকায় অবস্থান করে ভারতে কথা বলতেন বলে দাবি করেছেন। সাইফুল আলম যশোরের অভয়নগর উপজেলার দামুখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য। তিনি দত্তগাতি গ্রামের বাসিন্দা। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে বোমা তৈরির ৯৬০ গ্রাম বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডিবি জানায়। সাইফুল আলম তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলার আসামি বলে এসআই মফিজ জানান। তিনি বলেন, সাইফুল আলম নিষিদ্ধ পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। একইসাথে শিমুল ভ‚ইয়ার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করেন সাইফুল।
ডিবি পুলিশ যশোরের উপ পরিদর্শক মফিজুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাঁচড়া বাবলাতলার আমিনের মৎস্য হ্যাচারিতে তারা অভিযান চালান। এ সময় সেখান থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বারকে আটক করা হয়। আটক সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতি গ্রামের কাশেম মোল্লার ছেলে। তিনি শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়ার সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। ডিবি কর্মকর্তা আরও জানান, সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার এক সময় মাছের ব্যবসা করতেন। সেই সূত্র ধরে ৫ দিন আগে চাঁচড়া বাবলাতলায় এসে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে তিনি ভারতে যোগাযোগ করতেন। ভারতীয় সিম দিয়ে তিনি ভারতের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে কথা বলতেন। তবে ভারতে ছিলেন না বলে দাবি তার। এ সময় তার ব্যবহার করা নাম্বারটি দেশে না ভারতে ব্যবহৃত হতো, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে এসআই মফিজ ইত্তেফাককে বলেন, এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে।
এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতি গ্রামের রকিবুল ও সুব্রত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি শিমুল ভ‚ইয়া ও সাইফুল। এছাড়া মনিরামপুর উপজেলার পাচাকড়ি গ্রামের উদয় শংকর হত্যা মামলার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সাইফুলের নাম এসেছে। এই জবানবন্দির সূত্র ধরে গত ২ ফেব্রæয়ারি থেকে তার গ্রেফতারের জন্য ডিবি চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু যখনই অভিযানে যাই, তখনই শুনি সে ভারতে আছে।
যে দুই হত্যা মামলায় শিমুল-সাইফুলের সম্পৃক্ততা : আলোচিত শীর্ষ চরমপন্থী নেতা শিমুল ভুঁইয়া যশোর ও খুলনা অঞ্চলের ৬টি হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় দামুখালীতে সুব্রত মন্ডল ও দত্তগাতিতে খন্দকার রকিবুল ইসলামকে গুলি চালিয়ে হত্যার মূল হোতা শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী ছিলেন সাইফুল আলম মোল্লা। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যার শিকার ঐ দুজনও চরমপন্থী ছিলেন বলে ডিবি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। নিহত সুব্রত মন্ডল অভয়নগর উপজেলার দামুখালী গ্রামের মৃত অনাদী মন্ডলের ছেলে এবং খন্দকার রকিবুল ইসলাম খুলনার ফুলতলা উপজেলার উত্তর আলকা এলাকার মাহবুব খন্দকারের ছেলে। এর মধ্যে সুব্রত মন্ডল পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী ও খন্দকার রকিবুল ইসলাম ফুলতলা বাজার বণিক সমিতির ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন।
সম্প্রতি সুব্রত মন্ডল হত্যা মামলায় ১৫ জন ও খন্দকার রকিবুল ইসলাম হত্যা মামলায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করে যশোরের আদালতে পৃথক চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল। এরমধ্যে খন্দকার রকিবুল ইসলাম হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত ১১ জনের মধ্যে শিমুল ভুঁইয়া ও তার অন্যতম সহযোগী সাইফুল আলম মোল্লাও রয়েছেন। ২০২২ সালের ১২ মে রাত সোয়া ৮টার দিকে খন্দকার রকিবুল ইসলাম তার বান্ধবী পিয়ারী বেগম ওরফে বর্ষাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতিতে যান সাইফুল আলম মোল্লার কাছে গ্যাসের কবিরাজি ওষুধ আনতে। মূলত সাইফুল আলম মোল্লা গ্যাসের করিবাজি ওষুধ দেওয়ার কথা বলে ফাঁদ পেতে খন্দকার রকিবুল ইসলামকে ডেকে আনেন। পরে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দত্তগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে তার বান্ধবী পিয়ারী বেগম ওরফে বর্ষা আহত হন। এ ঘটনায় নিহতের মা রহিমা বেগম ১৩ মে অভয়নগর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল জানান, নিহত খন্দকার রকিবুল ইসলাম চরমপন্থী সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তিনি ঘের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন বলে অভিযোগ ছিল। তার জন্য প্রতিপক্ষ চরমপন্থীরা ঐ এলাকায় সুবিধা করতে পারতো না। এ কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পেতে ডেকে এনে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ চরমপন্থীরা। মামলার তদন্তকালে এই হত্যার সাথে শীর্ষ চরমপন্থী নেতা শিমুল ভুঁইয়াসহ ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এ কারণে তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।
অপরদিকে সুব্রত মন্ডল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ আসামীর মধ্যেও শিমুল ভুঁইয়া ও তার সহযোগী সাইফুল আলম মোল্লা রয়েছেন। ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে অভয়নগর উপজেলার দামুখালীতে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেন সুব্রত মন্ডলকে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অমৃত মন্ডল ১৩ জানুয়ারি অভয়নগর থানায় মামলা করেন। এই মামলা তদন্তকালে ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল হত্যায় তাদের সম্পৃক্ততা পান। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা সুব্রত মন্ডলকে হত্যা করেন বলে জানা যায়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ