ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি মরদেহের খন্ডিতাংশের মাংসপিন্ড সদৃশ বস্তু উদ্ধার হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ওই আবাসনে পরীক্ষা চালানোর সময় পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির সদস্যরা এই বস্তুগুলো উদ্ধার করেন। মাংসপিন্ড সদৃশ বস্তুগুলো লোক দিয়ে তুলিয়ে আলাদা করা হয়। প্রায় ৩/৪ কেজির মত ওই মাংসপিন্ড সদৃশ ‘রহস্যজনক’ বস্তু পাওয়া গেছে। মানুষের বিষ্ঠা লেগে থাকা ওই বস্তুগুলো ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহাংশ কি না, জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা করাবে কলকাতা সিআইডি। দেহাংশ প্রমাণিত হলে সেক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের ডাকা হবে।
উদ্ধার হওয়া বস্তুগুলো আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃতদেহের অংশ বিশেষ তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ ব্যাপারে কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ ও ডিবির ওয়ারী বিভাগের ডিসি এম এ আহাদ গতকাল রাতে বলেন, আমরা কলকাতা স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি মরদেহের অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেটি সংসদ সদস্য আনারের কি না তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তাছাড়া কলকাতা সিআইডি বা পুলিশ আমাদের এখনও অফিসিয়ালি নিশ্চিত করেনি।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ বলেন, কলকাতার সিআইডিকে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সেপটিক ট্যাংক ভেঙে তল্লাশি চালানোর জন্য। মরদেহ বা দেহাংশ উদ্ধার হলেও সেটি যে সংসদ সদস্য আনারের তা আগাম বলার সুযোগ নেই। ডিএনএ টেস্ট করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মঙ্গলবার বিকালে কলকাতা পুলিশ নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের স্যুয়ারেজ লাইনের পাইপ ও সেপটিক ট্যাংকে মরদেহের খন্ডিতাংশের খোঁজে অভিযান চালায়।
ঘটনাস্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘কাজ শেষ করে আমি আসছিলাম। ওখানে দেখলাম অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে এবং অনেকখানি মাংসের মতো উঠে এসেছে। তারপর সেখানে আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না।’
ভেতরে কারা আছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ ও উদ্ধারকারীরা সেখানে আছেন। যে পরিমাণ মাংসপিন্ড সদৃশ বস্তু উদ্ধার হয়েছে তার ওজন তিন থেকে চার কেজি হবে।
তিনি আরও বলেন, দেখে মনে হচ্ছে মাংস কুচি কুচি করে কেটে প্যানের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোই পাইপ দিয়ে সেপটিক ট্যাংকে গিয়ে জমা হয়েছে।
তিনি বলেন, সন্ধ্যার দিকে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে বিষ্ঠার মধ্যে ঢিল আকৃতির কিছু বস্তু পাওয়া যায়। লোক দিয়ে সেগুলিকে তুলিয়ে আলাদা করা হয়। তারপর সেগুলি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সেগুলি দেহাংশ কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাক্রম ধরলে ১৫ দিন অতিক্রান্ত। ফলে সেগুলি দেহাংশ হলেও যথেষ্ট পঁচে গেছে। তার সঙ্গে সেপটিক ট্যাঙ্কে থাকা একাধিক মানুষের বিষ্ঠাও মিশে গেছে। ফলে প্রথম পর্যায়ে এগুলিকে পরিষ্কার করে বোঝার চেষ্টা করা হবে আসলেই এগুলি কোনও মানুষের দেহাংশ কি না। তা নিশ্চিত করা গেলে তবেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এগোনো হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দলের প্রতিনিধি ডিসি এম এ আহাদ বলেন, আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভ‚ঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে ওই ফ্ল্যাটে বাথরুমে ফ্ল্যাশের কথা জানায়। এরপর ভারতে এসে আমরা ওই ফ্ল্যাটটি পরিদর্শন করি এবং ভারতীয় পুলিশকে পরামর্শ দেই বাথরুমের পাইপ ভেঙে সেফটি ট্যাংক দেখতে। এরপর কিছুক্ষণ আগে শুনেছি পাইপ থেকে মরদেহের খন্ডিতাংশের মাংসপিন্ড সদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে।
মরদেহের অংশ পাওয়ার আশাবাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঃ
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের অংশ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, বসে নেই। আশা করি কিছু পাবো। মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঈদুল আজহার প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘শুধু ডেড বডিটা ছাড়া সব ইনফরমেশন- যারা যারা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, যারা খুন করেছেন সব কিছুর খবর আমরা পেয়েছি। তারা যেভাবে খুন করেছেন তাতে ডেড বডিটা উদ্ধার করাই বাকি। আর সবকিছুই আমাদের কাছে চলে আসছে।’
মরদেহ না পেলে তার আসন শূন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি স্পিকার জানেন। সংবিধান অনুযাযি তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন।’
পুলিশ ডাকলে ডিএনএ নমুনা দিতে কলকাতা যাবেন ডরিন ঃ
ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে বাবার মরদেহের খন্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু খন্ডিতাংশ বাবার কি না তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এজন্য ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে কলকাতা পুলিশ ডাকলে সেখানে যাবো। গণমাধ্যমের কাছে একথা বলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি বলেন, আমার ভারতীয় ভিসা হয়েছে। যদি কলকাতা পুলিশ ডাকে তবে ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে সেখানে যাবো। ডরিন বলেন, আমার বাবা হত্যার সঠিক বিচার চাই। আসামি যারা রয়েছে তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা হোক।