spot_img

আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৪৩ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা

আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এ বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশে¡র সকল দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করা হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবা দিয়ে বিশ্বের ৪৩টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ১৩টি দেশে ৬ হাজার ৯২ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন, যার মধ্যে রয়েছে ৪৯৩ জন নারী শান্তিরক্ষী। শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে বাংলাদেশের সর্বমোট ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এরমধ্যে ১৩১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, নৌবাহিনীর ৪ জন, বিমান বাহিনীর ৯ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ২৪ জন সদস্য রয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ২৫২ জন বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী আহত রয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর ২৪০ জন এবং পুলিশের ১২ জন সদস্য। তারপরও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা-মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের সঙ্গে মিশে গেছেন। বর্তমানে ৯টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। সব দেশের জনগণ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ব্যাপক প্রশংসা করেন। তারা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করেন বাংলাদশী শান্তিরক্ষীদের। পেশাদায়িত্ব, আর্তমানবতার সেবা, চিকিৎসা সেবা, রাস্তা নির্মাণ, গৃহহীনদের ঘর করে দেয়া, স্কুল-কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, অসুস্থ নারী-পুরুষ ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদান, দরিদ্রদের ঘরে খাবার পৌছে দেওয়া, শিশুদের লেখাপড়া করতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শান্তিরক্ষীরা জনগণের নিকটআতœীয়ের মতো জায়গা করে নিয়েছেন। এ কারণে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ৪৩টি দেশের মধ্যে অনেকে দেশেই সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের পণ্য ব্যবহার করেন। ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি সিয়েরালিওন, লাইবেরিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সাউথ সুদান ও লেবাননসহ বিভিন্ন মিশনে যান। সেই সকল দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, এ সময় তারা বাংলাদেশী সেনাবাহিনীর ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। অনেক দেশে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ছাড়া যেন অন্য দেশের সেনাবাহিনী না দেওয়ার দাবি জানানো হয়। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে প্রথমে অন্য দেশের মিশন ছিল। বিদ্রোহীসহ কেউ তা মেনে নিতে পারেনি। পরে জাতিসংঘ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের সেখানে পাঠানো হয়। সিয়েরালিওনে ১১ বছর যুদ্ধ হয়েছে বিদ্রোহীদের সঙ্গে। রাস্তা ছিল না, পুরো দেশ ছিল খোলা মাঠের মতো। ফল-ফলাদি সবই হয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অবস্থা বিরাজ করায় অনেক লোক এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নেতৃত্বে সেখানে নির্বাচন হয়। ড. আহমেদ তেজান নির্বাচিত হন। সিয়েরালিওনবাসী বাংলাদেশ ছাড়া কোন মিশনকে মেনে নিতে পারেনি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাসস্থান, চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। কৃষি উপকরণ দিয়েছে, যাতে মানুষ স্ববলম্বী হতে পারে। এ কারণে দেশটির সাধারণ জনগণ সরকারের দাবি জানায়, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই। পরে সিয়েরালিওন সরকার দ্বিতীয় ভাষা বাংলা স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের অনেক পন্য তারা ব্যবহার করে। এরকম সকল দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। যার যার ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছেন। প্রত্যেকটি দেশ অনুরূপভাবে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন প্রধানরাও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একের পর এক মিশন সফলতার সাথে সম্পন্ন হওয়ায় প্রসংসা করেন। এই ধারা অব্যাহত আছে। ওই সকল দেশের জনগণও জাতিসংঘের মিশন প্রধানদের কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। মিশন প্রধানরাও প্রশংসার চিঠি দিয়েছেন সরকার প্রধানকে।
১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা-মিশনে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদযাত্রা সূচিত হয় ১৯৮৯ সালে; নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ পুলিশের এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৫৩ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মিশনে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১০ জন নারী। বর্তমানে ৬টি দেশে পুলিশের ১২০ জন নারীসহ ৩৬৪ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৪ জন পুলিশ শহীদ হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় এক অনন্য নাম। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সোচ্চার ও জোরালো ভ‚মিকা পালন করছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে শান্তি ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাদৃত হচ্ছে। তিনি এ উপলক্ষে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সকল শান্তিরক্ষীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। একইসাথে তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর শান্তিরক্ষী সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি-বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীগণ পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করার ফলে আমরা জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা লাভ করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকার কথা আমি গর্বভরে স্মরণ করছি এবং শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিশ্বশান্তির জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জনকারী শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। আমি তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মস‚চির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন এবং সকল শান্তিরক্ষীর সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করেন।
কর্মসূচি
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মস‚চি হাতে নিয়েছে। আজ বুধবার সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে, যেখানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪’ উদ্বোধন করবেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকট-আত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ