ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউটাউনে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যা রহস্য তদন্ত করতে ডিবির তিন সদস্যের টিম কলকাতায় গিয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সরকারের আদেশনামা আমরা হাতে পেয়েছি। আগামী ১২ ঘন্টার মধ্যে আমরা বিমানযোগে কলকাতায় রওনা দিব।’
তিন সদস্যের টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিবি প্রধান। এই টিমের বাকি দুই সদস্য হলেন ডিবির উপকমিশনার (ওয়ারী) এম এ আহাদ ও অতিরিক্ত উপকমিশনার সাহিদুর রহমান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসা ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো অফিসার অন্তু কুমার ও জয় দ্বীপের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি স্পেশাল টিম দুই দিন ঢাকায় অবস্থান শেষে শনিবার বিকালে কলকাতায় ফিরে যান। দুই দিন অবস্থান করে ভারতের এই স্পেশাল টিম বাংলাদেশের ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃত তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরা হলেন আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল ওরফে তানভীর ভ‚ঁইয়া। এরা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ৮ দিনের রিমান্ড হেফাজতে রয়েছেন।
হত্যার আগে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ঃ
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ বলেন, হত্যাকান্ডের মদতদাতা আক্তারুজ্জামান শাহীন গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় তিন জনকে নিয়ে যান। সেই দলে একজন নারীও ছিলেন। কিলিং মিশন বাস্তবায়নে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে শাহীন ১০ মে পর্যন্ত কলকাতায় অবস্থান করে দেশে চলে আসেন। গ্রেপ্তার আসামীদের কাছ থেকে আমরা বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। যেহেতু ভারতীয় পুলিশ আমাদের এখানে কাজ করছে। তাদের কাজ শেষ হলে আমরাও কলকাতায় চলে যাবো।
কী কারণে এমপিকে হত্যা করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন উর রশীদ বলেন, এই হত্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হত্যার মূল কারণ তদন্ত শেষে বলা যাবে।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন উর রশীদ বলেন, আগেও সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সর্বশেষ বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও হত্যার চেষ্টা করেছিল। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়বার চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ১৮ তারিখ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল কলাকাতায় যান। সেই সময়ে হত্যাকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কলকাতায় যায়। কিন্তু হোটেলে থাকার কারণে সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তৃতীয় দফায় তারা হত্যা করতে সফল হয়েছে।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, হত্যার আগে তাদের (হত্যাকারীদের) পরিকল্পনা ছিলো সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে জিম্মি করে বø্যাকমেইল করা। এরপর তার আপত্তিকর ছবি তুলে দুইদিন বø্যাকমেইল করে হুন্ডির মাধ্যমে এবং কলকাতায় থাকা তার বন্ধুদের কাছ থেকে তার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আদায় করা।
আনার হত্যায় ক্লোরোফর্ম ব্যবহার ঃ
কিন্তু আনার কলকাতার ভাড়া করা ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পরে তার মুখে ক্লোরোফর্ম (চেতনানাশক) ব্যবহার করায় তিনি জ্ঞান হারান। অজ্ঞান অবস্থায় আনারের আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। তবে হত্যাকারীদের মূল টার্গেট আনার কে হত্যা করাই ছিলো। কিন্তু এর আগে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশের একটি দল ঢাকায় কাজ করছে। পাশাপাশি আমাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দুটি বিষয় পেয়েছি। দুটি গ্রæপ এখানে কাজ করেছে। একটি গ্রæপ মদদ দিয়েছে আরেকটি গ্রæপ হত্যাকান্ড বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি-না? জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কিছুই বলা যাবে না। তবে অনেকগুলো বিষয় আছে। তদন্ত শেষ করে আমরা আপনাদের জানাতে পারবো।
হত্যার ঘটনায় কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিসের ভিত্তিতে হত্যার কথা বলা হচ্ছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা অনেক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছি না। প্রমাণ পেয়েছি বলেই কলকাতায় হত্যা মামলা হয়েছে। আমাদের দেশে একটি মামলা হয়েছে। কলকাতায় মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। নিশ্চয় তারা আলামত পেয়েছে।