spot_img

পরিকল্পনা শাহীনের, কিলিং মিশনের প্রধান মোকাররম

বাংলাদেশ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে। খুনিরাও একই সময়ে ভারতে গেলেও তারা একসঙ্গে যাননি। কিলিং মিশনের প্রধান মোকাররম এমপি আজিমের পরিচিত। ভারতে যাওয়ার পর তারা একসঙ্গে হন। অন্যদিকে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জনৈক শাহীনও ঘটনার সময় ভারতে ছিলেন। এরপরপরই তিনি দেশে ফেরেন এবং দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। হত্যাকান্ডের সময় সঞ্জিবা এপার্টমেন্টের ওই ফ্ল্যাটে ৬ জন ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশী বলে নিশ্চিত হয়েছে। মোকাররম, সিনথিয়া ও মারুফ নামে তিনজনকে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। এর মধ্যে মোকাররম পুরো হত্যাকান্ডের ঘটনার বর্ণণা দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। কেন হত্যাকান্ড সে সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছেন।
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান গতকাল বুধবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘আজ সকালেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তিনি খুন হয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আমরা তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’ আটককৃতরা কী হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে? জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, অনেক তথ্যই জানা গেছে। এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’
যেভাবে এই হত্যাকান্ড : গত ১২ মে ভারতে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আজিম তার পূর্বপরিচিত বন্ধুসম্পর্কীয় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন ১৩ মে বেলা ২টার দিকে তিনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বের হন। এর মধ্যে আজিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন সিনথিয়া ও মোকাররম। তাদের সঙ্গেই তিনি সঞ্জিবা এপার্টমেন্টের ওই ফ্ল্যাটে যান। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, আজিমের সঙ্গে তিনজন ভেতরে যাচ্ছেন। এদের একজন নারী। অন্য দুইজন পুরুষ। ধারণা করা হচ্ছে, এই তিনজন হলেন, মোকাররম, সিনথিয়া ও মারুফ। তবে খুনের সময় ছিলেন ৬ জন। অন্য তিনজনের ব্যাপারে এখনও বিস্তারিত জানতে পারেনি পুলিশ। এদের দুইজন ভারতীয় নাগরিক বলে পুলিশের ধারণা।
ওই ফ্ল্যাটে আজিমকে হত্যার পর লাশ তিন টুকরো করা হয়। তিনটি ব্যাগে ভরে তিনজনকে ব্যাগগুলো ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাগগুলো তারা কোথায় ফেলেছে সে ব্যাপারে মোকাররম কিছু বলতে পারেনি। সিসিটিভির ফুটেজ বলছে, ১৩ মে তারা ফ্ল্যাটে ঢুকলেও ওইদিন কেউ বের হননি। পরে একজন ১৫ মে, একজন ১৬ মে, একজন ১৭ মে বের হন। কিন্তু আজিমকে আর বের হতে দেখা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ওই ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ পেলেও ফ্ল্যাটের মধ্যে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখন লাশের সন্ধানে অভিযান চলছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, মোকাররম দক্ষিন ও দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বড় স্বর্ণ চোরাকারবারী। মারুফ এক সময় ভারতের বাসিন্দা ছিলেন। পরে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায় মাইগ্রেট হয়ে চলে আসেন। তিনি স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িত। এরা দু’জনই আজিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ট।
শাহীনের সঙ্গে আজিমের কেন বিরোধ : মোকাররম গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন, শাহীনের সঙ্গে আজিমের বিরোধ দীর্ঘদিনের। আজিমের চিনির ব্যবসা আছে। এছাড়াও তারা দু’জন আরও কিছু ব্যবসায় জড়িত। সেই ব্যবসার ৪ কোটি টাকা আজিম পাবেন শাহীনের কাছে। কেউ বলছেন, এটা হুন্ডির টাকা, আবার কেউ বলছেন, এটা স্বর্ণ চোরাকারবারির টাকা। মোকাররমও নিশ্চিত নন, এই টাকা আসলে কিসের টাকা। তবে ৪ কোটি টাকা বিরোধের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শাহীন টাকা দিচ্ছেন না। নির্বাচনের আগে গত অক্টোবরে এ নিয়ে মিমাংশা বৈঠক হয়। বৈঠকে মিমাংশাও হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের দ্ব›দ্ব থেকে যায়। কয়েকদিন আগে একে অপরকে হুমকি দিয়েছে। সেখানে শাহীন বলেছে, আমি টাকা দেবো না, আর আজিম বলেছে, কিভাবে টাকা আদায় করতে হয় আমি জানি। এরপর বিরোধ আর বাড়ে।
এরপর শাহীন এমপি আজিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তার এই পরিকল্পনায় যোগ দেন মোকাররম ও মারুফ। সিনথিয়াকে ব্যবহার করে কিলিং মিশন সম্পন্ন করেন তারা। হত্যাকান্ডের সময় শাহীনও ভারতে ছিলেন। দুই দিন পরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর একদিন পরই দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ