ভারতে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনানের গতকাল পর্যন্ত কোনো সন্ধান পায়নি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তার সন্ধানে ভারতীয় বিশেষ টাস্কফোর্স-এসটিএফ’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা(ডিবি) পুলিশ। এসটিএফ ঢাকার ডিবিকে জানিয়েছে যে সর্বশেষ তার অবস্থান ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরবাদ এলাকায়। ডিবি ধারণা করছে, ভারতের দিল্লীতে যেতে মুজাফফরাবাদ অতিক্রম করতে হয়। এমপি আজিম হয়তো ট্রেনযোগে কলকাতা থেকে দিল্লিীতে যাচ্ছিলেন।
ডিবির একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, সোমবার ভারতে জাতীয় নির্বাচনের ৫ম ধাপের ভোট গ্রহণ হওয়ায় গোয়েন্দা সংস্থা এমপি নিখোঁজের বিষয়টি কোনো তদন্ত করেনি। তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো আপডেট নেই।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, বেশ কয়েকটি কারণকে সামনে রেখে ডিবি পুলিশ এমপি আজিমের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে। তার বিরুদ্ধে হুন্ডি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের রুটও তিনি নিয়ন্ত্রন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বা দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ভারতে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর সিন্ডিকেটের একটি বড় ‘চেইন’ ঝিনাইদহে নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ ভারতের হন্ডি সিন্ডিকেট যোগাযোগ করে ঝিনাইদহে। ঝিনাইদহ থেকে ভারতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা (ভারতীয় রুপি) পৌঁছে দেয়ার ম্যাসেজ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে দুই দেশের হুন্ডি সিন্ডিকেটের মধ্যে টাকা/রুপি অবৈধ লেনদেনের সময় একটি মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এমপি আজিমের বিরুদ্ধে। ওই সিন্ডিকেটই কৌশলে তাকে কলকাতা থেকে ডেকে নিয়ে অপহরণ করেছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা করছে। তবে সব কিছুর সত্যতা মিলবে তাকে উদ্ধারের পর।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি দুদিন আগেই জানতে পারি। ভারতীয় একজন ভদ্রলোক এমপিরও পরিচিত, তিনি আমাকে টেলিফোন করে তাকে না পাওয়ার বিষয়টি জানান। জানার পর ভারতীয় বিশেষ টাস্তফোর্স-এসটিএফ’র সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভারতীয় থানা পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আনোয়ারুল আজিমের একটি বাংলাদেশি ও আরেকটি ভারতীয় নম্বর ছিল। ১৬ মে সকাল ৭টার দিকে তার নম্বর থেকে দুটি কল আসে। একটি আসে তার এপিএসের নম্বরে, আরেকটি ফোনকল আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নম্বরে। কিন্তু তখন দুজনের কেউই কল ধরতে পারেননি। ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় জানতে পেরেছি, আনোয়ারুল আজিমের ভারতীয় নম্বরের লোকেশন মুজাফফরাবাদ, অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ। সবকিছু মিলিয়ে আমরাও খোঁজখবর রাখছি। আনোয়ারুল আজিম তার ব্যবহৃত নম্বরটি মাঝে মাঝে খুলছেন আবার মাঝে মাঝে বন্ধ করছেন। কারা কাজটি করছেন, তিনি কোনো বø্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন কি না- সবকিছুই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।’
এদিকে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনানের সন্ধান না পাওয়ায় তার পরিবার ও স্বজনদের পাশাপাশি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ উদ্বেগ- উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা নজরুল ইসলাম সানা বলেন, ভারতে চিকিৎসা করতে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর জানার পর তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ তার ফিরে আসার প্রতিক্ষায় আছে। কালীগঞ্জ পৌর সভার মেয়র মোঃ আশরাফুল আলম বলেন. এমপি আনোয়ারুল আজিম আনানের খোঁজ সোমবার বিকাল পর্যন্তও পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ও মেয়ে কলকাতায় গেছেন। তারাও কোন খোঁজ খবর জানাননি তবে মানুষের প্রত্যাশা তিনি দ্রæত কালীগঞ্জে ফিরে আসুক।