মার্শাল আর্টে বø্যাক বেল্ট পাওয়া রানা ২০০২ সালে হুজিনেতা ও ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আবদুর রউফের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহে যান। ময়মনসিংহের ভালুকায় সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৭ সালে বাবা, মামা, ভগ্নিপতিসহ মোট ১৮ জন সদস্য হুজি নেতা আবদুর রউফের সঙ্গে বৈঠকের সময় ভালুকার জঙ্গল থেকে র্যাব। এরপর রানা সাজা খেটে বেরিয়ে আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। বর্তমানে কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিলেন, পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। রিক্রুট করা নতুন সদস্যদের পার্বত্য বান্দরবান জেলায় ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’র (কেএনএফ) আস্তানায় পাঠাতেন তিনি।
এরইমধ্যে ৩ জনকে কুকি চিনের আস্তানায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়েছেন। তার পরিকল্পনা ছিল সারাদেশ থেকে আরো নতুন সদস্য রিক্রুট করে ওই আস্তানায় পাঠানো। এমনকি প্রশিক্ষণের খরচ বাবদ কুকি-চিনের কাছে লক্ষাধিক টাকাও পাঠান এ রানা। গত সোমবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) গোয়েন্দা তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর কল্যানপুর ও গাবতলী এলাকায় রানাসহ জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার বাকি দুজন হলেন- মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার ও হাবিবুর রহমান। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩টি স্মার্টফোন ও ২টি বাটনফোন উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে তাদের প্রশিক্ষণের ভিডিও ছবি আছে।
গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার মশিউর রহমান প্রথমে ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। ২০০২-২০০৩ সালে হুজির সদস্য হিসেবে ময়মনসিংহে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৩ সালে হুজি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেডসহ ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে চার বছর সাজা খাটেন। ২০২১ সাল থেকে পাহাড়ি বৈরী পরিবেশে কমান্ডো হিসেবে টিকে থাকা, পিটি-প্যারেড শিখা, আন আর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল চালানো, বোমা সামগ্রী তৈরি এবং ব্যবহারসহ সিকিউবি বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য দুই বছর বান্দারবানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অবস্থান করেন। এই কষ্টকর প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে সমতলে ফেরত আসেন মশিউর। আর হাবিবুর রহমান ছিলেন সংগঠনের নতুন রিক্রুট। তিনি আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মী হিসেবে আমির হোসেনের অধীনে কাজ করতেন। আমির হোসেন একই মতবাদে দীক্ষিত করে তাকে ইতোমধ্যে জঙ্গি সংগঠনে রিক্রুট করে বান্দবানে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ডিবি প্রধান বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম ও জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) মুক্তিপ্রাপ্ত এবং পলাতক বেশ কিছু সদস্য মিলেমিশে একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ গঠন করেন। নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা বিশ্বাস করে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক ধর্মযুদ্ধ হবে। কোনো এক সময় দাজ্জালের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে মুসলিম নিধনের বড় রকমের চেষ্টা করা হবে। ইসলামকে সমুন্নত রাখতে এবং মুসলমানদের সুরক্ষা দিতে যারা ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক এ ধর্মযুদ্ধে তারা অংশ নিবে। বদরের যুদ্ধে অংশ নিলে শহীদ অথবা গাজীদের মতো মর্যাদা পাবেন বলে বিশ্বাস করেন তারা।
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ধারাবাহিক তৎপরতায় সফল জঙ্গি অভিযানের কারণে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি সমতল এড়িয়ে পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ খুঁজছিল। পার্বত্য বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে বসবাসকারী বম স¤প্রদায়ের বিভ্রান্ত সন্ত্রাসীদের দ্বারা গঠিত কেএনএফের সঙ্গে যোগাযোগ হয় শারক্বীয়ার। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অভিযানে এদের অনেক সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সংগঠনটিতে ৫৩ জনের মতো সদস্য ছিল। এরমধ্যে ৪৯ জন ধরা পড়ে গেছে। গ্রেপ্তার রানা বর্তমানে সংগঠনের প্রধান রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। সারা দেশ থেকেই তাদের সদস্য রিক্রুটের পরিকল্পনা ছিল। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে হয়তো আরেকটা গ্রæপকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো। তাদের সঙ্গে আরও কারা জড়িত জানার চেষ্টা করব। জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।