তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্পে এবার বিনিয়োগ করতে চায় ভারত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং অত্যন্ত চমৎকার। এই সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এদিকে বিনয় কোয়াত্রার সফর শেষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার গতি বাড়াবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হলেও আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বৈঠকে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তায় আমরা একটা বৃহৎ প্রকল্প নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমি বলেছি, তিস্তায় যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে, সেটা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। আমাদের প্রয়োজন যাতে পূরণ হয় সেভাবে হতে হবে। তিস্তা প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে চীন এরই মধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত যে এক্ষেত্রে সহায়তা করতে চাইছে, সে বিষয় নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর সফর হবে। এখন ভারতে নির্বাচন চলছে। নির্বাচনের পর সরকার গঠন হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সফর কবে সেটি ঠিক হবে। প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং যাওয়ারও কথা হচ্ছে, কোনটি আগে হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন, দিল্লি আমাদের কাছে, বেইজিং একটু দূরে। প্রধানমন্ত্রীর অনেক আগে থেকেই ভারত সফরের কথা রয়েছে কিন্তু সেখানে যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, শেষ না হওয়া পর্যন্ত কখন সফর হবে সেটি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
বৈঠকে আলোচনার বিষয় প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সহজে যাতে মানুষ ভিসা পায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা আন্তরিক। এছাড়া দেশে-দেশে যোগাযোগ, সংযোগ যেন আরও বাড়ে সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটা অনেক দূর এগিয়েছে, বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়া এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জল বিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সহায়তা করার বিষয়টি এগিয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সব কিছু চ‚ড়ান্ত হয়েছে, ট্যারিফও অনেকটা চ‚ড়ান্ত হয়েছে। সেটি আমাদের ক্রয় কমিটিতে যাবে। সেটি হলে আমরা নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারব ভারতের ওপর দিয়ে।
অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভিসানীতি সহজ করা নিয়ে আলোচনা করেছি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- সীমান্তে যে মাঝে মাঝে সীমান্ত হত্যা হয়, সেটি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করার ওপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি এবং তিনি জানিয়েছেন, তাদের বর্ডার সিকিউরিটি গার্ডকে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তারা সেটি অনুসরণও করেন। অনেক কাছ থেকে যখন প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেটি তখন প্রাণঘাতী হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। এটি নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী, সরকারি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই- যাতে এখানে ‘জিরো ক্যাজুয়ালিটি’ হয়। মাঠ পর্যায়ে সীমান্ত রক্ষীদেরও সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের আহŸানের মধ্যে মানুষ উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে ভারতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়, নেপালে হয়, পাকিস্তানেও হয়। সে হিসেবে আমাদের নির্বাচনে সহিংসতা অনেক কম। টুকটাক যে হয়নি সেটি নয়, কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে। অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এখানে সহিংসতা অনেক কম হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। ভোটার উপস্থিতিও অত্যন্ত সন্তোষজনক।
এই সফরে সম্পর্ক জোরদার হবে: ভারত
বিনয় কোয়াত্রার সফরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই দিনের সফরে পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এই সফর ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সফরকালে সচিব কোয়াত্রা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা, পানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, সংযোগ এবং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ বিস্তৃত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন। বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম উন্নয়ন এবং বাণিজ্য অংশীদার। পররাষ্ট্র সচিবের সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার গতি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।