চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় বিমানের পাইলট স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ নগরীর ঈসা খান ঘাটির নৌবাহিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কো-পাইলট উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দুই বৈমানিক অসীম সাহসিকতার সঙ্গে বিমানটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যান। এরপরই রাশিয়ার তৈরি ওয়াইএকে-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে নদীতে আছড়ে পড়ে। গতকাল বিকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের তত্ত¡াবধানে দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটিকে উদ্ধারের কার্যক্রম চলছিল। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান বাহিনী। এদিকে, বিমান দুর্ঘটনায় স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার আনুমানিক সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার পর দুই বৈমানিক উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন এবং স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। তাদেরকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার করা হয়। বৈমানিক দু’জনের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রæত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আইএসপিআর জানায়, বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে বৈমানিকদ্বয় অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে বিমানটিকে বিমান বন্দরের নিকট অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) এয়ার ভাইস মার্শাল মু. কামরুল ইসলাম ঢাকা থেকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করেন। বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল একেএম শফিউল আজম দুর্ঘটনা পরবর্তী কার্যক্রম তত্ত¡াবধান করছেন।
উল্লেখ্য, স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ১৯৯২ সালের ২০ মার্চ মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ডা. মো. আমান উল্লাহ এবং মাতার নাম নীলুফা আক্তার খানম। তিনি ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ থেকে বিএসসি (এ্যারো) পাশ করেন। তিনি ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। চাকরীকালীন সময়ে তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পেশাদারী দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এছাড়াও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘চিফ অফ এয়ার স্টাফ’স ট্রফি ফর বেস্ট ইন ফ্লাইং (ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স) অর্জন করেন। চাকরীকালীন তিনি দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন। কমিশন প্রাপ্তির পর তার চাকরীকাল ১২ বছর ৫ মাস ৯ দিন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৩২ বছর ১ মাস ২০ দিন। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।