অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে যোগদানের আগে হাবিবুর রহমান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এভিপি থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় তিনিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক।
দুদক জানায়, হাবিবুর রহমান ২০০০-২০০৩ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় ব্যাংকটির গ্রাহক প্যাট্রিক ফ্যাশনস লিমিটেডের নামে ঋণ প্রস্তাবের মঞ্জুরিপত্র ছাড়াই কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই প্রতিষ্ঠানকে ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঋণ দেন হাবিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি ওই ঋণ পুনঃতফসিলের জন্যও সুপারিশ করেন। ঋণের সুদ বাবদ ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয় মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ওই ঋণ আত্মসাতের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১১ কোটি টাকা হারিয়েছে ব্যাংকটি। ঘটনার সময় হাবিবুর রহমান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্টের (এভিপি) দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপ-পরিচালক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে হাবিবুর রহমানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি তিনি ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গত রবিবার হাবিবুর রহমানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, এমডি হাবিবুর রহমান এখন পলাতক রয়েছেন এবং ব্যাংকে অফিস করেন না। তবে তিনি জামিন নিয়ে হয়তো আবার ব্যাংকে যোগদানের চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে, আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় এমডির বিরুদ্ধে চার্জশিট ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়ায় তার আর এই পদে থাকার অধিকার নেই। আর্থিক কেলেঙ্কারির যে তকমা তিনি লাগিয়েছেন সেখানে এমডি হিসেবে তিনি আর নৈতিকভাবে যোগ্য নন।
এ প্রসঙ্গে উচ্চ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন জানান, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি দুদকের চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় তিনি যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হবেন এবং এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে তিনি হয়তো জামিনের চেষ্টা করবেন। কিন্তু মূল বিষয়, আর্থিক কেলেঙ্কারির যে তকমা তিনি লাগিয়েছেন সেখানে এমডি হিসেবে তিনি আর নৈতিকভাবে যোগ্য নন। আইনগতভাবে সমস্যটা দ্রæত মিটিয়ে ফেলার বিষয় নয়। তবে গ্রাহকের কাছে তার যে আস্থা ছিল সেটা হারিয়ে ফেলছেন।
ফলে এ ঘটনায় তিনি এমডি পদে থাকার অযোগ্য হয়ে পড়ছেন। ব্যাংকিংখাতের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকিংখাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত, পেশাগতভাবে দক্ষ, অভিজ্ঞ ব্যক্তিই এমডি হতে পারবেন। তবে ফৌজদারি আদালতে দন্ডিত কিংবা জাল জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্যান্য অবৈধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন না।
এ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, জাল জালিয়াতি ও নৈতিক স্খলনের মতো ঘটনায় জড়িত থাকলে তিনি এ পদের যোগ্য হবেন না। অর্থনীতিবিদরাও মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করলেই হাবিবুর রহমান এখন আর এমডি থাকতে পারেন না। বর্তমান তার বিরুদ্ধে দুদকের যে মামলা চলমান রয়েছে তাতে তিনি নৈতিকভাবেই এ পদে আর থাকতে পারেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগই মিথ্য। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমিও এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেব।