spot_img

গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, চালকসহ আহত ৪, তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন, ৩ জন বরখাস্ত

গাজীপুরে মহানগরের ছোটদেওড়ার কাজীবাড়ি এলাকায় ডাবল লাইনের আপ লাইনে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন ও একটি তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটেছে। এতে চালকসহ চারজন আহত, দুই ট্রেনের ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ ও ৫ টি কোচ দুমড়ে গেছে। শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জয়দেবপুর জংশনের দক্ষিণ পাশের (ঢাকার দিকে) আউটার সিগন্যালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনা কবলিত টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনে যাত্রী ছিল না। দুর্ঘটনাস্থলে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে পূর্বঞ্চল বিভাগ এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্তব্যে অবহেলার কারণে জয়দেবপুর জংশনের দায়িত্বরত এক স্টেশন মাস্টার ও দুই পয়েন্টম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঢাকা-জয়দেবপুর ডাবল রেল লাইন থাকলেও দুর্ঘটনার পর উভয় লাইনেই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুর্ঘটনা কবলিত কমিউটার ট্রেনের বাকি ৫টি কোচ জয়দেবপুর জংশনে সরিয়ে নিলে দুপুর সোয়া একটার দিকে এক লাইনে (ঢাকাগামী) ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
আহতদের মধ্যে ৩ জনকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন, লোকো মাস্টার ( ট্রেন চালক) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর গ্রামের আতাবুর রহমানের ছেলে শরীফ মাহমুদ (৩৮), লোকো মাস্টার ঢাকা রেলওয়ের লোকেশর এলাকার মৃত মমিন উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৫৮) ও সহকারী একই এলাকার শাহ আলমের ছেলে সবুজ হাসান (৪৬)।
সরেজমিনে, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বেলা পৌনে ১১ টার দিকে কাজীবাড়ী এলাকায় জয়দেবপুর জংশনের আউটার সিগন্যালে ডাউন লাইনে ঢাকাগামী টাঙ্গাইল কমিউটার না ঢুকে আপ লাইনে ঢুকে পড়ে। এতে বিপরীতগামী (রংপুরগামী) তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিন ও ৫ টি কোচ দুমড়ে যায়। তেলবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ ও তিনটি ট্যাংকার লাইনচ্যুত হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরকার শাহদাত আলী, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- কমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং উদ্ধার কাজ তদারক করেন।
দেখা গেছে, জয়দেবপুর-ঢাকা রেল রুটের পশ্চিম পাশের লাইনটি জয়দেবপুরগামী আর পূর্বপাশের লাইনটি ঢাকাগামী। পশ্চিম পাশের লাইন দিয়ে রংপুরগামী তেলবাহী ট্রেনটি জয়দেবপুর জংশনে প্রবেশ করছিল। অপরদিকে প্রায় একই সময়ে ঢাকাগামী কমিউটার ট্রেনটি জয়দেবপুর জংশন ছেড়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আউটার সিগন্যালে গিয়ে কমিউটার ট্রেনটি পশ্চিমপাশে (জয়দেবপুর জংশনগামী) আপ লাইনে ঢুকে পড়ে এবং মুখোমুখি সংঘর্ষের শিকার হয়। কমিউটার ট্রেনের লাইনচ্যুত বগিগুলোর বেশ কয়েকস্থানে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এ সময় কমিউটার ট্রেনের পাঁচটি বগি ঢাকাগামী লাইনে ছিল। তেলবাহী ট্রেনের একটি বগি থেকে তেল বের হচ্ছিল। পরে অপর ট্রেনের ইঞ্জিন নিয়ে ওই পাঁচবগি জয়দেবপুর জংশনে সরিয়ে নিলে ঢাকাগামী লাইন সচল করা হয়। পরে দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে ওই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। জানা গেছে, ট্রেন দুইটির ছিল ধীর গতিতে। তাছাড়া টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন।
গাজীপুর সদর মেট্রো থানা ওসি সৈয়দ রাফিউল করিম বলেন, কমিউটার ট্রেনটি যাত্রীবাহী হলেও কোন যাত্রী ছিল না। দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন দুই ট্রেনের চালক এবং দুইজন সহকারী। তাদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জয়দেবপুর জংশনের সিনিয়র মাস্টার মো. হানিফ আলী জানান, দুর্ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার কারণে জয়দেবপুর জংশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার আবুল হাসেম, পয়েন্টম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমানকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন ও জয়দেবপুর জংশনের সিনিয়র মাস্টার মো. হানিফ আলী। এ কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ঢাকাগামী যাত্রীবাহী কমিউটার ট্রেনটিতে কোন যাত্রী ছিল না। তেলবাহী ট্রেনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটি মেরামতের চেষ্টা চলছে। ডাবল লাইন থাকা সত্তে¡ও মুখোমুখি সংঘর্ষ কেন হলো ? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো গাফিলতির কারণে, না টেকনিক্যাল ত্রæটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে কাজ হচ্ছে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন রওনা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বঞ্চলের বিভাগীয় ম্যানেজার শফিকুর রহমান, রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এবং রেলওয়ে বিভাগ থেকে পৃথকভাবে ৫ সদস্য বিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দুটিকে ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌছে লাইনচ্যুত ইঞ্জিন ও বগিগুলো উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। উদ্ধারকাজ শেষ হতে সময় লাগবে।
ট্রেন দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনাাস্থলে উত্তরের বিভিন্ন স্টেশনে জামালপুর কমিউটার, রাজশাহী সিল্কসিটি, হাওর এক্সপ্রেস, ডাকা কমিউটার, বহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দক্ষিণের বিভিন্ন স্টেশনে ভূড়িমারী এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, জামলপুর এক্সপ্রেস, অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস আটকা পড়ে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ