spot_img

নৌকার পাটাতনের নিচে অক্সিজেন সংকটে মারা যান বাংলাদেশি ৮ জন

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভ‚মধ্যসাগরে মারা যাওয়া আট বাংলাদেশির লাশ আড়াই মাস পর তিউনিসিয়া থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে পৌঁছেছে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মরদেহগুলো সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নেওয়া হয়। আজ শুক্রবার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। এরপর ধাপে ধাপে পরিবারের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।
নিহত বাংলাদেশিরা হলেন, মামুন শেখ, সজল বৈরাগী, নয়ন বিশ্বাস, রিফাত শেখ, সজীব কাজী, ইমরুল কায়েস, মো. কায়সার ও রাসেল শেখ। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুরে ও তিনজনের বাড়ি গোপালগঞ্জে। বিমানবন্দরে লাশের অপেক্ষায় থাকা নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা বলছেন, ৩০ জন যেতে পারবেন এমন একটি ছোট নৌকায় ৫২ জনকে নিয়েছিল দালালেরা। যে আটজন মারা গেছে, তাদের নৌকার পাটাতনের নিচে জোর করে রাখা হয়েছিল। তারা অক্সিজেন সংকটের কারণে পাটাতন থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু দালালেরা তাদের মারধর করে আবার সেখানে পাঠায়। এভাবে নির্যাতন ও অক্সিজেন সংকটে তারা মারা গেছেন।
এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল ইসলাম। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নিহত মো. কায়সারের ভগ্নিপতি শাওন ফকির বলেন, দালালেরা লিবিয়া থেকে কায়সারকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার জন্য আট লাখ টাকা নিয়েছিল। বলেছিল বড় নৌকায় করে ইতালি পৌঁছে দেবে। তিনি বলেন, বেশি লোক হওয়ার কারণে কায়সারসহ আটজনকে নৌকার পাটাতনের নিচে রাখা হয়। কায়সারের ছোট দুটি মেয়ে রয়েছে। বাবাকে ছাড়া কীভাবে মেয়ে দুটি মানুষ হবে?
গত ১৫ ফেব্রæয়ারি ভূমধ্যসাগরে নৌকায় অগ্নিকান্ডে ৯ জন নিহত হন। নিহত অন্যজন পাকিস্তানের নাগরিক। ওই নৌকায় প্রায় ৫২ অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাচ্ছিলেন।
আমাদের টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গ্রামের বাড়ীতে তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে। কবর খোড়াসহ সকল প্রস্তুতি নিয়েছে স্বজনেরা। নিহতদের মধ্যে একজন রাজৈর উপজেলার পশ্চিম সরমঙ্গল গ্রামের মামুন শেখের মা হাফেজা বেগম জানায়, বৃহস্পতিবার লাশ দাফনের সকল প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা লাশ আসার অপেক্ষায় আছি। জানতে পেরেছি ময়না তদন্তের পর মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। নিহত মামুন গ্রীস প্রবাসী ইউসুফ শেখের ছেলে।
স্বজনরা জানায়, চলতি বছর ১৪ই জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে ১৪ ফের্রুয়ারী লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওয়ানা দেয় তারা। তিউনিসিয়ার ভুমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে আগুন ধরে যায়। পরে ভুমধ্যসাগরে ডুবে যায় নৌকাটি। এতে রাজৈর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মামুন শেখ (২২), সেনদিয়া গ্রামের সজল বৈরাগী (২২), কদমবাড়ী গ্রামের নয়ন (২০) বিশ^াস ও কিশোরদিয়া গ্রামের কাওসার (২২) ও মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদনের ছেলে রিফাত (২৩), ফতেপট্রি গ্রামের রাসেল (২২) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইমরুল কায়েস আপনের (২২) মৃত্যু হয়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ