spot_img

হেপাটাইসিস বি ও সি রোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। প্রতি বছর প্রায় ২২ হাজার রোগী মারা যায়। হেপাটাইটিস সংক্রমণ ক্রমে করোনা মহামারির মতো প্রকট হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চঝুঁকিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রথমে রয়েছে চীন এবং দ্বিতীয় ভারত। এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্মের সংক্রমণ ও মত্যু ঠেকাতে দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সুচিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর আহŸান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডাব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি আক্রান্ত রোগী ৩০ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ২৫ কোটি ৪০ লাখ হেপাটাইটিস বি ও পাঁচ কোটি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস বহন করছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্তদের অর্ধেকের বয়স ৩০ থেকে ৫৪ বছর। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ পুরুষ এবং ১২ শতাংশ শিশু। সম্প্রতি বিশ্ব হেপাটাইটিস সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত ডাব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুসারে ১৮৭টি দেশের নতুন তথ্যে দেখা গেছে, ভাইরাল হেপাটাইটিসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২০২২ সালে ১৩ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ১১ লাখ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, বাংলাদেশে হেপাটাইটিসের বি ভাইরাতে ৫ ভাগ ও সি ভাইরাসে ৮ ভাগ আক্রান্ত। প্রায় ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে প্রায় এক কোটি আক্রান্ত। এটা এমন ভাইরাস মানব দেহে চুপ করে বসে থাকে। আস্তে আস্তে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। পরবর্তীতে লিভার সিরাসিস ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও চিকিৎসা সেবার সুলভ ব্যবস্থা করা দরকার। বাংলাদেশে এক কোর্স ওষুধের মূল্য ৮৫ হাজার টাকা। যেটা ভারতে ৯ হাজার রূপি। ২০৪১ সালে যেহেতু উন্নত বাংলাদেশ হবে, এই নীরব ঘাতকের ব্যাপারে সচেতনা সৃষ্টি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা প্রয়োজন। সারাদেশে হেপাটলজিস্ট আছেন মাত্র ১৬০ জন। গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন সাড়ে ৫০০। সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হেপাটাইটিসের চিকিৎসার আলাদা ইউনিট চালু করতে হবে। যেকোন বয়সে মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই প্রাণঘাতি রোগ মানব জাতিকে ধ্বংস করে দিবে। কারণ নীরব এই ঘাতক বোঝার আগেই রোগীর জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে বিশ্বমানের হেপাটাইটিস ও গ্যাস্ট্রো লিভারের বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে, সেটা মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালে। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সকল ব্যবস্থা রয়েছে। বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। যে টেস্ট বেসরকারি হাসপাতালে করাতে ১৬ হাজার টাকা, সেটা এখানে ৩ হাজার টাকায় করা যায়। যে পরীক্ষা এখানে ২৫০ টাকায় করা হয়, বাইরে বেসরকারি হাসপতালে সেই পরীক্ষা করাতে ৫ হাজার টাকা লাগে। ২৫০ বেডের হাসপাতালটিতে ডাক্তাররা আধুনিক ব্যবস্থায় সুচিকিৎসা প্রদান করছেন। প্রতিদিন এই হাসপাতালে রোগীদের মারাত্মক বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় রোগীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় হাসপাতালটিকে ৫০০ বেডে উন্নীত করার জন্য ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছেন। বিষয়টি অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালে পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম কিবরিয়া বলেন, বর্তমানে হেপাটাইটিসের প্রচুর রোগী আসছে। বেশিরভাগ রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। বিশ্বমানের চিকিৎসা সব রোগীরা পাচ্ছে স্বল্প খরচে। এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা-যা বিদেশে মধ্যবৃত্তের পক্ষে করা সম্ভব না। সরকারি এই হাসপাতালে প্রতি বছর সময় মতো চিকিৎসা দেওয়ার কারণে হাজার হাজার রোগীর জীবন বেঁচে যাচ্ছে। কারণ শুরুতে রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ৩০ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের। অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সময় বেশি আক্রান্ত হয়। বোঝার আগেই সব কিছু শেষ হয়ে যায়। নীরব ঘাতকের মতো। এই বয়সীরা মারা যাওয়ায়, ওই পরিবারও চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। এছাড়া ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা চালাতে গিয়েও সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক পরিবার। তাই আমাদের সময় থাকতে এখনি প্রস্তুতি নিতে হবে। যে হারে রোগটা বাড়ছে, সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অসম্ভব হয়ে যাবে। এই রোগ প্রতিরোধে সব সরকারি হাসপতালে আলাদা ইউনিট চালু করতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে আলাদা হাসপাতাল থাকা উচিত। যাতে মানুষ হাতের কাছে চিকিৎসা সেবা পায়। পাশাপাশি এই দেশে ওষুধ তৈরির সক্ষমতা আছে। ইপিআরের মতো টিকা দেওয়া যেতে পারে। টিকা দিয়ে রোধ করা সম্ভব। হেপাটাইটিসের টিকাও আছে, জন্মের পর থেকে টিকা দেওয়া যায়।
যেভাবে হেপাটাইটিস রোগ হয়: অনিরাপদ রক্ত ( পেশাদার ডোনার), সিরিঞ্জ, দৈহিক মিলন, মাদকাসক্ত, একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে ড্রাগের ব্যবহার, অনিরাপদ আকুপাঞ্চার, মা থেকে নবজাতকের ছড়াতে পারে। এছাড়া টুথব্রাশ ও সেভিংয়ের উপকরণের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন হেপাটাইটি বি ও সি-এই দুই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। তবে এই দুটি প্রাণঘাতি ভাইরাস হলেও প্রতিরোধযোগ্য।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ