মুদ্রা বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে এখনো ঘাটতি আছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশের উচিত হবে নমনীয় বা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতির আঞ্চলিক পূর্বাভাস বা রিজিয়নাল ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করার পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ আর্থিক হিসাব ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাবে। উল্লেখ্য এর আগেও আইএমএফ এর পক্ষ হতে ডলারের দর বাজার ভিত্তিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পর ডলারের দর নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতী চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি হলো দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এতে মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। মুদ্রার দরের সর্বোচ্চ এবং সর্বনি¤œ সীমা নির্ধারণ করা থাকে। এতে মুদ্রার দাম একেবারেই খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। এ পদ্ধতি বিশ্বের কয়েকটি দেশে থাকলেও এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডলারের দর বাজার ভিত্তিক হয়নি। এখনও আমদানি-রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সে দুই ধরণের দর রয়েছে। তাছাড়া খোলা বাজারের সঙ্গে দামের পার্থক্য রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি চলমান। আইএমএফ দ্ইু কিস্তির অর্থও ইতিমধ্যে ছাড় করছে। তৃতীয় কিস্তি অর্থ পাওয়ার কথা আগামী মাসে। এ ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণের বিষয় আছে। তার মধ্যে রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মার্চ শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু মার্চ শেষে দেশের নিট রিজার্ভ ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার কম। এজন্য বার বার ডলারের দর বাজার ভিত্তিক করার পরামর্শ দিচ্ছে আইএমএফ। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম থাকার জন্য আর্থিক হিসাব ভালো না থাকাকেও দায়ী করেন কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন। একই কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা টাকাও চাপের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শ্রীনিবাসন আরো বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা মোকাবিলা করার চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ। দেশটি সক্রিয়ভাবে এ বিষয়ে আইএমএফের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে এবং আইএমএফ সেই সহায়তা করছেও। আর তাই সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখন কিছুটা ভালো করছে বাংলাদেশ। আইএমএফ মনে করছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হার গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম। আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬ শতাংশ। আইএমএফ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আইএমএফ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ছয় মাস আগের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।