অবশেষে দৃশ্যমান হল প্রমত্তা যমুনার বুকে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’। এই রেলসেতু নির্মানের সর্বশেষ ৪৯ নম্বর স্প্যানটি গতকাল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন যমুনার বুকে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু বঙ্গবন্ধু রেলসেতু।
এ ব্যাপারে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেত’ু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসউদুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এই সেতুর সুপার স্ট্রাকচার (বাহ্যিক দৃশ্যমান) পুরোটাই শেষ হয়েছে। এখন রেলসেতুর কিছু কাজ বাকি রয়েছে। রেলসেতুতে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মানও শেষে দিকে। হয়তো আগষ্ট মাসে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে। পরীক্ষামূলক সকল কাজ শেষ করে আগামী ডিসেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরবঙ্গের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই রেলসেতু উদ্বোধন করবেন।
রেল মন্ত্রনালয়ের একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারা দেশের রেলযোগাযোগ ও রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রান্সএশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি বেগবান হবে।
যমুনার নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের সেতু নির্মান করা হচ্ছে। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই ও টিওএ করপোরেশন এই ৫ টি প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অংশে দুইটি প্যাকেজের আওতায় ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর স্প্যানে ¯িøপারবিহীন রেললাইন বসানো হচ্ছে। দেশের রেললাইনে জাপানি এ প্রযুক্তির ব্যবহার এটাই প্রথম। এ প্রযুক্তিতে স্টিল স্ট্রাকচারের গার্ডারের সঙ্গে রেললাইনের সংযোগ প্রযুক্তিতে কোনো ¯িøপার থাকবে না। রেলসেতুতে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ দুই ধরনের রেললাইনের সমন্বয়ে ডুয়েলগেজ ট্র্যাক বসানোর কাজ চলছে। ডাবল লাইনের এই সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর অর্ধাবৃত্তাকৃতির বিপরীত অংশে ভারি লোহার পাত যুক্ত করে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করায় একটি ট্রেনকে সেতু পাড়ি দিতে ২২ মিনিট সময় লাগে। এতে করে সেতুর দুই দিকে ট্রেনের জট সৃষ্টি হয়। এ কারণে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেলযোগাযোগে প্রতিটি ট্রেনকে গড়ে ৩০ মিনিট করে বেশি লাগে।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেত’ু প্রকল্প পরিচালক বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু চালু হলে প্রতিদিন ৬৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। নতুন রেল সেতু চালু হলে একদিকে যেমন ট্রেনে গতি ফিরবে তেমনি যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।