এবার মাদক গডফাদারের তালিকায় কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। গত দুবছর অনুসন্ধান করে মাদক কারবারে জড়িত ১২২ জনকে গ্রেফতারের পর ১০ গডফাদারকে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। গতকাল বুধবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘সিআইডির জালে মাদকের গডফাদাররা: বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, মাদক মামলার মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা বদির ভাইসহ অনুসারীদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তার ভাইরাও আছে এবং তাদের অনুসারীরাও আছে। আব্দুর শুক্কুর ও আমিনুর রহমান- এই দুজন বদির ভাই। সব সাক্ষ্যপ্রমান পেলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ওই পরিবারের অবৈধভাবে অর্জিত ৬ দশমিক ৯ একর সম্পত্তি শনাক্ত করেছি, আরও সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। ‘বদির বিরুদ্ধেও যদি আমরা সাক্ষ্য-প্রমান পাই তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। যার বিরুদ্ধে তথ্য -প্রমান পাবো তাকেই ধরা হবে। ’
সিআইডি জানায়, ১০ মাদক মামলায় মাদকের গডফাদারদের গাড়ি, বাড়ি, জমি, ব্যাংকে থাকা টাকা ক্রোক করা হয়েছে। এসব মামলা ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। সারা দেশে মোট মাদক মামলা রুজু হয়েছে- ২০২১ সালে ৭৯ হাজার ৬৭৫টি, ২০২২ সালে ৮২ হাজার ৬৭২টি এবং ২০২৩ সালে ৭৬ হাজার ৪০৩টি। এসব মামলা থেকে স্পর্শকাতর ৩৫টি মামলা তদন্ত করে মামলার মূল হোতা তথা গডফাদারদের মাদক ব্যবসা থেকে অবৈধভাবে অর্জিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাকৃক অর্থ, ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ লন্ডারকৃত বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পায়। এসব মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৭৮.৪৪ কোটি টাকা।
মোহাম্মদ আলী বলেন, সিআইডি ইতোমধ্যে উল্লিখিত মামলাসমূহের মধ্যে তিনটি মামলায় গডফাদারদের ৯.১৪ একর জমি ও ২টি বাড়ি যার মূল্য আনুমানিক ৮.১১ কোটি টাকা ক্রোক এবং মাদক সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং বিভিন্ন মামলায় ব্যাংকে গচ্ছিত ১ কোটি ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা ফ্রিজ করেছে। আরও ৩৫.১৭৩ একর জমি, ১২টি বাড়ি ও ১টি গাড়ি যার মূল্য অনুমান ৩৬.৮২ কোটি টাকা- এসব ক্রোকের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
সিআইডি প্রধান বলেন, ১০ মামলার তদন্ত শেষে আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের সম্পত্তিগুলো ক্রোক করেছি। বাকি মামলার সম্পত্তিগুলো ক্রোক করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। দেশের ৬৪ জেলায় মাদক মামলা আছে।
প্রতি বছর ৮০ থেকে ৮৫ হাজার মাদক মামলা হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে মাদক বহনকারীদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। যেহেতু আমরা গডফাদারদের নিয়ে কাজ করা শুরু করছি দেখি কতগুলো ধরতে পারি। এখন পর্যন্ত ১০ মামলায় ১২২ জনকে গ্রেফতার করেছি। তার মধ্যে ১০ জন গডফাদার রয়েছে।