প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর তৈরি হওয়া উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতির দিকে তীক্ষè নজর রাখার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি এই কনফ্লিক্ট (যুদ্ধ) দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে তা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশসহ মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করছেন।
এপ্রিলের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে; যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করছে ইরান। এর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার রাতে ইসরাইলের ভ‚খন্ডে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এই ঘটনায় ইরাক, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে একদিনের জন্য বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয় কিনা বিশ্লেষকরা সেই আশঙ্কা করছেন। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাসের যোগানদাতা অঞ্চল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মিডলইস্টে এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেদিকে নজর রাখার জন্য সবগুলো মন্ত্রণালয়কে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্য রিয়্যাকশন কী হতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সংঘাত দীর্ঘমেয়াদী হলে সেটা মোকাবেলা কীভাবে করা হবে সেজন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ঘটনা প্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পর্যালোচনা করছেন। মন্ত্রণালয়গুলোকেও পর্যালোচনা করতে বলেছেন। কী কী করতে হবে সেটা ঠিক করতে বলেছেন।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যার যার সেক্টরে যেন প্রস্তুতি নেওয়া হয়, সেটি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর রাখতে হবে। মন্ত্রিসভার সব সদস্য ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলেছেন ঘটনা প্রবাহের দিকে তীক্ষè নজর রাখার জন্য। যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রভাব পড়তে পারে, সেটি যেন সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে পর্যালোচনা করে প্রস্তুত করে, তা মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ক্রাইসিস তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, তখন কী করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে বলেছেন। সবাইকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এক্ষেত্রে যাতে কোনো কিছু ‘রিঅ্যাকটিভ’ না হয়, বরং ‘প্রোঅ্যাকটিভ’ হতে বলেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রæত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে কেবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদিত সিদ্ধান্ত এখনও কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে তার কারণও জানতে চেয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুমোদন পাওয়া ১৬টি আইন রয়েছে-যা এখনও আইন আকারে উপস্থাপনের জন্য সংসদে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের একটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৪টি আইন রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হলে কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, এখনও কেন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, তা বিস্তারিত আকারে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো জানান, যেসব আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের পরও সংসদে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো সম্ভব হয়নি- কেন তা সম্ভব হয়নি, সে বিষয়ে দ্রæততম সময়ের মধ্যে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কবে নাগাদ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বা আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা তাও জানাতে বলেছেন তিনি। প্রয়োজনে সেসব সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলেও যেন তা মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হয়, সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত ও চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনারের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সামরিক সরকারের আমলের যেসব অধ্যাদেশ বর্তমানে প্রযোজ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে-সেগুলোকে আইনে রূপান্তর করার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া ওই অধ্যাদেশটি ইংরেজি ভাষায় করা হয়েছে। সরকার এ অধ্যাদেশটি বাংলা ভাষায় আইনে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই আলোকে তৈরি করা আইনের খসড়াটি গতকাল মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আইনটিতে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। আগে যেসব সুযোগ- সুবিধা দেওয়ার বিধান ছিল এখনও সেটাই বহাল রাখা হয়েছে। বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন নির্বাচন কমশিনাররা।