মঙ্গলবার সকালে ফরিদপুরের সড়কে ঝড়লো নারী শিশুসহ ১৪ জনের প্রাণ। সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের কানাইপুর এলাকায় বাস ও পিকাপ এর মুখোমুখি সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা সকলেই ওই পিকাপের যাত্রী। তারা ত্রাণের ঢেউটিন নিতে ফরিদপুরের দুর্যোগ ও ত্রান কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এদিকে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির ছিল না কোন ফিটনেস, অপরদিকে পিআপটি সম্পর্ন বেআইনীভাবে যাত্রী পরিবহন করছিল।
সকাল ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ১১ জন মারা এবং ফরিদপুরের হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও চিকিসাধীন অবস্থায় ১ জন এবং ঢাকায় নেয়ার পথে আরো এক জন মারা যান। এই ঘটনায় আহত ৪ জন এখনো হাসপাতালে চিতিৎসাধীণ রয়েছে। আহতরা হলেন, আলফাডাঙ্গা পৌর এলাকার হিদাডাঙ্গা গ্রামের রবিউল আলমের স্ত্রী আকলিমা বেগম ও একই এলাকার ইকবাল শেখের স্ত্রী পপি বেগম, তার ছেলে ইরফান শেখ (২) ও নিহত রাকিবের মা খুড়িয়া বেগম (৭০)।
নিহতরা হলেন, বোয়ালমারী শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রাম রাকিব হোসেন মিলন ( ৪২) ও তার স্ত্রী সামিমা ইসলাম সুমি (২৫), তাদের বড় ছেলে আলভী রোহান (৭) এবং ছোট ছেলে আবু সিনান (৪) ,মৃত আব্দুল ওহাবের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৭০), পিকআপ চালক আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদি গ্রামের নজরুল মোল্ল্যা (৩৫), আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বেজিডাঙ্গা গ্রামের জানাহারা বেগম (৫০), তার ভাতিজি প্রবাসীর স্ত্রী সোনিয়া বেগম (৩০), সোনিয়ার ২ বছর বয়সী শিশু সন্তান নুরানী, সদর ইউনিয়নের চরবাকাইল গ্রামের তবিবর খান (৫৫), হিদাডাঙ্গা গ্রামের শুকুরন বেগম (৯০), তার মেয়ে মনিরা বেগম সূর্য (৫৫), প্রতিবেশী কহিনুর বেগম (৬০), মোঃ ইব্রাহীম (৩২)।
নিহত সোনিয়ার স্বজন রহমান মোল্ল্যা বলেন, ফরিদপুরে ত্রানের টিন নেয়ার জন্য সকালে পিকাপ যোগে ফরিদপুরে রওয়ানা হন তারা। বোয়ালমারী শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের নিহত রাকিব হোসেন মিলনের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, আমার ভাই মিলন সচিবালয়ে চাকরী করে। সে তার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এলাকার কিছু দরিদ্র পরিবারের জন্য ত্রানের কিছু বরাদ্দ করেছিলো। সেটা আনতেই আজ সাকলে ফরিদপুরে আসছিল তারা। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনা। এতে আমার ভাইয়ের পুরো পরিবার একসাথে মৃত্যু বরন করেন। আমার মা’ও ছিলেন তাদের সাথে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সকাল ৮ টায় দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ শুর করে। খবর পেয়ে করিমপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার অভিযানে নামে। পরে জেলা পুলিশের একাধীক টিম যোগ দেয় উদ্ধার কাজে। ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার এবং জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার শাহীনুল আলম।
চান মিয়া নামে প্রতক্ষদর্শী এক রিক্সা চালক জানান, ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েক’শ গজ দূরে ছিলেন, পিআপটি একটি বাউলি দিয়ে বাসের সামনে চলে আসলে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সাথে সাথে পিকাপে থাকা শিশুসহ অন্যান্য যাত্রীরা ছুরে ছিটে রাস্তার উপর পরে যায়। সে দৃশ্য দেখার মত না ভাই। মাদ্রসা শিক্ষক এনামুল হাসান জানান, প্রথমে তারাই ঘটনাস্থলে আসেন, তখনো কেউ এসে পৌছায়নি। আমরা এসেই পুলিশ ও ফায়ার সর্ভিসকে খবর দেই। ওই সময়ে চিত্র আসলে ভাষায় বর্ণনা করার মত না।
এ বিষয়ে জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ বাবর গনমাধ্যমকর্মীদেও জানান, তারা ত্রাণ নিতে আসছিলেন বলে জেনেছি। আমরা প্রতিবছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দিয়ে থাকি। যখন যারা আসে তখনই দেয়া হয়, এজন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ দেয়া হয় না।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তাৎক্ষনাত নিহতদের দাফন কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা দেন। একই সাথে পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রনালয় থেকে নিহতদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ও আহতদেও জন্য ৩ লক্ষ টাকা দেয়া হবে বলে জানান। একই সাথে জেলা প্রশাসক জানান, এই ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদেরকে আগামী ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
হ্ইাওয়ে পুলিশ সুপার শাহিনুল আলম বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত ইউনিক পরিবহনের বাসটির ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালে। বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে ওই বাসের বিরুদ্ধে। তাছাড়া পিকাপে যাত্রী পরিবহন সম্পূর্ন বেআইনী। কিভাবে মহাসড়কে তারা যাত্রী পরিবহন করছিল সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়াও দুর্ঘটনার কারন হিসেবে তিনি অতিরিক্ত গতি এবং চালকদের ক্লান্তি, তন্দ্রাভাবকে প্রাথমিকভাবে দেখছেন। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে আসল ঘটনা জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম জানান, খবর পেয়েই হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজ শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকেই পিকাপের চালকসহ ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকী ২ জন ফরিদপুরের হাসপাতালে মারা যান, আরো ১ জন পরবর্তীতে ঢাকা নেয়ার পথে মৃত্যু বরন করেন। নিহত সকলের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালক, যাত্রী ও সাধারনের সচেতনাতার বিকল্প নেই।