ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড দাপিয়ে বেড়ানো তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম খন্দকার তানভীরুল ইসলাম ওরফে জয় মালয়েশিয়ার রাজ কুয়ালালামপুরে মারা গেছেন। ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে জয় আত্মগোপনে ছিলেন। গত ১২ এপ্রিল দুপুরে কুয়ালালামপুরে একটি তালাবদ্ধ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুডু থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার সকালে জয়ের বোন ছন্দা লাশ গ্রহণ করেন। লাশ গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছন্দা মালয়েশিয়ায় যান।
মালয়েশিয়ার ইউকেএম হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম তারেক রানা (৫০)। তিনি ভারতীয় পাসপোর্টধারী ছিলেন। তিনি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই তারেক রানাই খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়। এ কারণে জয়ের বোন ছন্দা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কুয়ালালামপুরে এসে সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসে ভাইয়ের লাশের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে দূতাবাস তাকে লাশ গ্রহণের এনওসি দেয়। সেটা হাসপাতালে জমা দিয়ে সোমবার তিনি লাশ গ্রহণ করেন। এরপর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কুয়ালালামপুরে একটি কবরস্থানে দাফন করেন।
অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ছিলেন জয়। ঢাকার মোহাম্মদপুরে নূরজাহান রোডের ডবিøউ লাইনের একটি দোতালা বাড়িতে তিনি থাকতেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে জয় ছিলেন বড়। মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোশেফ স্কুল থেকে ১৯৮৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় ৭ম স্থান অর্জন করেছিলেন। এরপর নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে একজন মেক্সিক্যান নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরেন। এরপরই জয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ফাইভ স্টার গ্রæপ বলে খ্যাত লিয়াকত-হান্নান গ্রæপের বিপরীতে তিনি সেভেন স্টার গ্রæপ গঠন করেন। ওই সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করতেন। এই পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ২০০০ সালে জয়কে পুলিশ গ্রেফতার করে। মাস ছয়েক পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশেই আত্মগোপনে থাকেন। ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন জোট সরকার তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় জয়ের নাম ছিল। এরপর জয় প্রথমে ভারতে আত্মগোপন করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকায় চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রন করতেন। ২০০৫ সালে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমেদ খুনের ঘটনায় তার নাম আসে। ২০০৭ সালে ভারতে অবস্থানের সময় কলকাতার সিআইডি তাকে গ্রেফতার করে। সেখানে কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে তারেক রানা নাম দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে চলে যান কানাডায়। এরপর টরন্টোতে ‘এসজে ৭১’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। সেখানে রানা অ্যাজাক্স নামে নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন। ২০১৫ সালে কানাডা পুলিশ তার ব্যাপারে তথ্য পেয়ে তদন্ত শুরু করে। ২০১৯ সালে কানাডা ছেড়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান জয়। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। জয় দুই বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী একজন মেক্সিক্যান নারী। সেই ঘরে একটি সন্তান আছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেও একটি সন্তান রয়েছে।