নিজ নিজ উপজেলার রাজনীতি নিজেদের কবজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর সংসদ সদস্যরা। অর্ধ শতাধিক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। দলের হাইকমান্ড আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাউকে সমার্থন না দিতে এমপিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করছেন অনেক সংসদ সদস্য। কোন কোন এমপির স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-ভাতিজা, শ্যালক, ভগ্নিপতি, মামা, ভাগ্নে, বেয়াইরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ পরোক্ষভাবে স্বজন ও নিজেদের অনুসারি-অনুগত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন। উন্মুক্ত নির্বাচনে প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে নাখোশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অর্ধ শতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কেন্দ্রে জমা পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র। শোকজ, সতর্কতা, তলব-এমনকি সংসদ সদস্যদের বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিস্কার না করলে সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকবে। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হওয়া দোষের কিছু নয়। তবে স্বজনদের সমর্থন দেওয়া সাংগঠনিক সিদ্ধান্তবিরোধী। দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদে এবার নির্বাচন হবে চার ধাপে। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ হবে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপ‚র্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টায় থাকতেন সরকারদলীয় এমপিরা। এবার তাদের চোখ পড়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। এমনকি স্বজনদের জিতিয়ে নিয়ে আসতে ‘অর্থ-ক্ষমতা-প্রভাব’কে হাতিয়ার করে মাঠে অর্ধশত এমপি। এদের মধ্যে কয়েকজন স্বতন্ত্র এমপি রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতীকবিহীন ভোটেও কেন এমপিদের পছন্দের একক প্রার্থী করতে হবে? এ প্রশ্ন তুলেছেন সবাই।
এমপির ছেলেকে প্রার্থী না করতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি: বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাহাদারা মান্নান। এই দুই উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দিতে সাহাদারা মান্নান তাঁর ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজলকে এবং সোনাতলায় ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই ঘোষণায় স্থানীয় নেতাদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। সজলকে প্রার্থী না করতে উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। এর অনুলিপি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও বগুড়া প্রেস ক্লাবে পাঠানো হয়েছে।
প্রেসিডিয়াম সদস্যের বিরুদ্ধে নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ: টাঙ্গাইল-১ (ধনবাড়ী-মধুপুর) আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক তাঁর নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী মনোনীত করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা করে প্রার্থী ঘোষণা দেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্য তাঁর নির্বাচনি এলাকায় উপজেলা নির্বাচনে আপন খালাতো ভাই ও নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে ‘চেয়ারম্যান’ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
নাটোরের সিংড়া উপজেলায় লুৎফুল হাবীবকে (রুবেল) ‘একক প্রার্থী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের শ্যালক। মাদারীপুর সদর উপজেলায় নিজের ছেলে মো. আসিবুর রহমান খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজাহান খান। আসিবুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের ছেলে সাদাত মান্নান চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন। এম এ মান্নান নিজেও বিভিন্ন আয়োজনে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগের আহŸায়ক খায়রুল হুদা এবারও প্রার্থী। তাঁর বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। একই উপজেলায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে যুবলীগের নেতা ফজলে রাব্বী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে প্রচার চালাচ্ছেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসরাফিল হোসেন। তিনি মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি এবারও নির্বাচন করবেন। নোয়াখালীর হাতিয়ায় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশীক আলীর নাম। সুবর্ণচর উপজেলায় নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হিসেবে তাঁর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেছেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা নির্বাচনে ভাগ্নে শোয়েব আহমেদকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি শাহাব উদ্দিন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগর টগর তাঁর নির্বাচনি এলাকা দামুড়হুদা উপজেলায় আপন ভাই আলী মুনসুর বাবুকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করেন। নরসিংদী-৩ আসনের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর নির্বাচনি এলাকা শিবপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম। তিনি তাঁকে সমর্থন জানাবেন।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই ন‚র ই আলম। অবশ্য সংসদ সদস্য ভাইয়ের পক্ষে প্রকাশ্যে নামেননি। পিরোজপুর সদর উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের ছোট ভাই বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন। ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজের ছোট ভাই বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুর ইসলাম এবারও প্রার্থী হচ্ছেন। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শামীম শাহনেওয়াজের ছোট ভাই বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন আহমেদও আবার প্রার্থী হচ্ছেন। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ছেলে। বরিশালের গৌরনদীতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর একান্ত সহযোগী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমানকে প্রার্থী করা হচ্ছে বলে দলীয় স‚ত্রে জানা গেছে। কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর ভাই গোলাম সরোয়ারকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। মুস্তফা কামালের নির্বাচনি এলাকার লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম শাহীন তার ভাতিজা। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। দ্বিতীয় ধাপে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ভোটে সরকারদলীয় এই এমপি তাঁর ছেলে গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পাকে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রী মিসেস হাসিনা গাজী তারাব পৌরসভার মেয়র।
দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরও এভাবে সংসদ সদস্যদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী ঘোষণা করায় বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় কোন্দল আরও বাড়ছে। কোন্দল নিরসনে আওয়ামী লীগ পৃথকভাবে প্রতিটি বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। সেখানে নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতেও অবৈধ হস্তক্ষেপ না করতে দলীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করার কর্মকান্ডে জড়িত না থাকার জন্য মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এখানে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকবে না।
এদিকে সংসদ সদস্য হওয়ার আশায় ছেড়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ। তবে ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এখন আবার ফিরতে চাইছেন উপজেলায়। ফলে সংসদ নির্বাচনের মাত্র চার মাসের মাথায় হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়বেন পদত্যাগ করা সেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের কয়েকজন। আইন অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৫০ জন উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ করেন। জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া চেয়ারম্যানদের অন্তত সাতজন আবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। আর বাকি পদত্যাগকারী চেয়ারম্যানরা এখনো নির্বাচন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি। তাঁদের উপজেলায় নির্বাচন হবে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে লড়াই হয় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের। জাতীয় নির্বাচনের রেশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও রয়ে গেছে। সংসদ সদস্যরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করছেন স্বজন, পরিবারের সদস্য ও নিজের অনুগতদের। ফলে পদত্যাগকারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যাঁরা আবার নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁদের লড়াই হবে সংসদ সদস্যের অনুসারীদের সঙ্গেই। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন। চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি হেরে যান জাতীয় পার্টির (জাপা) বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলমের কাছে। নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছিল জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত এইচ এম এরশাদের ভাগনে আহসান আদেলুর রহমানকে। সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন এবার উপজেলা নির্বাচন করবেন। খুলনার ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। তিনি ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শেখ আকরাম হোসেন। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাবির মিয়া পদ ছেড়ে গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন মোহাদ্দেস হোসেন। নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বেনজীর আহমদ বিজয়ী হন। মোহাদ্দেস হোসেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করবেন। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই আকন্দ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নও পান। কিন্তু জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে সমঝোতায় আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ফলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ ছাড়লেও সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি আবদুল হাই। তিনি আবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ সদস্য প্রার্থী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাইনুদ্দিন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান মাইনুদ্দিন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার জন নেতা জানান, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপিদের হস্তক্ষেপ না করতে এবং কাউকে সমর্থন না দিতে কেন্দ্র থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। যারাই হস্তক্ষেপ করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘দল কাউকে মনোনয়ন দেবে না। যারা ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন দিচ্ছেন তারা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা ও দলের সাধারণ সম্পাদকের বিবৃতি কোনোভাবেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। জনগণ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ভোট দেবে, যে কেউ প্রার্থী হতে পারবে। জনগণ পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচিত করবে। কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’ আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে যেসব স্থানে সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীরা সরাসরি কোনো প্রার্থীদের পক্ষ নিয়েছেন, তারা সরাসরি দলের সিদ্ধান্তবিরোধী কাজ করছেন। এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।