একই নামে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি ঋণ নেয়ার অভিযোগে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস (৪২), পল্লব দাস (৩৬), রফিকুল ইসলাম খান (৩৮) ও আলিফ হোসেন (২৩)। এদের মধ্যে পল্লব দাস রংপুর বিভাগীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে আইটি সেকশনে খন্ডকালীন নিযুক্ত ছিলেন। আর জয়নাল আবেদীন তার মাধ্যমে নিজ নামের জাতীয় পরিচয়পত্র ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে পরিবর্তন করিয়ে নিতেন। সম্প্রতি জয়নাল আবেদীন নন ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি থেকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ পান। ঋণ প্রাপ্তির কাগজপত্র মেঘনা ব্যাংকে জমা দিয়ে তার নামে প্রায় ৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার আবেদন করেন। মেঘনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার কাগজপত্র সন্দেহ হলে তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দারস্থ হয়। ডিবির রমনা বিভাগের উপকমিশনার হুমায়ন কবীরের নেতৃত্বে একটি টিম তদন্ত করে জয়নালের ঋণ জালিয়াতির তথ্য পায়। এরপরই শুক্রবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
গতকাল শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেফতারকৃত জয়নাল এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কয়েক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রতিটি ঋণের আবেদনের তিনি তার এনআইডি ও একটি জমির দলিল ব্যবহার করেছেন। এনআইডিতে তার নাম পরিচয় ঠিক রেখে এনআইডির সিরিয়াল নম্বর পরিবর্তনের জন্য পল্লব দাসের সহায়তা নিতেন। পল্লব দাস রংপুর বিভাগীয় নির্বাচন কমিশনে আইটি সাইটটি দেখতেন। এ কারণে পল্লব দাস নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ঢুকে তথ্য পরিবর্তন করতে পারতেন। সেই সুযোগটি জয়নাল কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে তার এনআইডি জমা দেন। এর সঙ্গে জমির দলিল একটাই দেওয়া হত। ওই জমির দলিলের বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করে জাল দলিল জমা দেয়া হত ব্যাংকে। এভাবেই তিনি কয়েক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার একটি সাত তলা বাড়ি রয়েছে। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তিনি চারটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান হারুন উর রশীদ বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ অনুমোদনের পেছনে হয়তো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে। সে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কয়টি ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন এবং তার পেছনে আর কারা কারা জড়িত রয়েছে- সে বিষয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ডিবির হারুন উর রশীদ আরো বলেন, এই প্রতারক জয়নালের এক সময় কিছুই ছিল না। তিনি ইমিটেশন পণ্যের দোকান করতেন। কিন্তু সেই ব্যবসায় লস করে তিনি ব্যবসা ছাড়েন। এরপর জড়িয়ে পড়েন প্রতারণায়। জয়নাল তার প্রতারণার জন্য একটি কোম্পানি খুলে সেখান থেকে আরও সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিল। পরে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের দিয়ে তিনি ঋণ নিতেন। আমরা তাকেসহ পল্লব দাসকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করব। পল্লব দাস জয়নালের মতো আর কতজনকে সার্ভার ব্যবহারে এমন কার্যকর এনআইডি তৈরি করে দিয়েছে। এছাড়া তারা আর কতটি ব্যাংক থেকে এমন ঋণ নিয়েছেন তা আমরা খতিয়ে দেখবো। এই পল্লবের সাথে আরও ইসির যদি কেউ জড়িত থাকে তাদেরও আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
পল্লব প্রতি এনআইডি বাবদ জয়নালের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ করে টাকা নিতেন। তবে এই পল্লব এনআইডি বানিয়ে দিয়ে কত টাকা নিয়েছেন এবং তার অর্থ সম্পদ করেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখবে ডিবি।
ডিবি বলছে, জয়নালের কার্যকর ১০টি এনআইডি ছিল। এসব এনআইডি দিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন। এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকতো। শুধু সেটির নম্বর পরিবর্তন করে আরেকটি তৈরি করতো। পল্লব দাসের কাছে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহৃত সার্ভারের পাসওয়ার্ড থাকতো। এই সুবাধে তিনি এসব বুয়া কার্যকর এনআইডি করতেন।