spot_img

কে এই নাথান বম

পার্বত্য চট্টগ্রামে ফের তান্ডব চালিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে একের পর এক সরকারি ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি। দুই দিনে তিনটি ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা করেছে এর সদস্যরা। নাথান বম নামে এক ব্যক্তির সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।


কেএনএফ দাবি করেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে কেএনএফ। কুকি-চিন রাজ্য নামে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চেয়ে তারা বলেছে, ওই রাজ্যে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা থাকবে। সেখানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এমএন লারমা) গঠিত জনসংহতি সমিতি ভেঙে কয়েকটি গ্রæপের সৃষ্টি হয়েছিল। কেএনএফ সেগুলোর মধ্য থেকে আসা একটি গ্রæপ।
নাথান বমের পুরো নাম নাথান লনচেও বম। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ২ নম্বর রুমা সদর ইউনিয়নের ইডেনপাড়ার বাসিন্দা মৃত জাওতন লনচেও এর ছেলে। ১৯৮০ সালে তার জন্ম। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, লেখাপড়ায়ও বেশ ভাল ছিলেন নাথান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকে সম্পন্ন করেছেন স্নাতকোত্তর। নাথান এক সন্তানের জনক। তার স্ত্রী স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক। পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। নাথান ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথমে যুক্ত ছিলেন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়া এলাকায় লারমা স্কয়ারে এমএন লারমার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয় ২০০০ সালে।


জানা গেছে, এরপর শিল্পী হিসেবে খ্যাতি বাড়ে। সে সময় হিল আর্টিস্ট গ্রæপেও যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি বম বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। কুকি-চিনভুক্ত জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নিয়ে ‘দ্য বমজৌ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এছাড়া গবেষণামূলক আরও পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়। এই কারণে নাথান লেখক হিসেবেও পরিচিত। তবে বর্তমানে তার অবস্থান কোথায় তা জানা যায়নি। নাথানের অবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২০০৮ সালে অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কুকি-চিন জাতীয় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও)।
সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার রূপ বদলাতে থাকে। ২০১৭ সালের পর থেকে নতুন রূপ ধারণ করেন নাথান। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করেন কেএনএফ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন নাথান। ২০১৬ সালে সশস্ত্র একটি গ্রæপ তৈরি করেন। পরে কেএনডিওর বদলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স (কেএনভি) নাম দিয়ে কার্যক্রম চালান। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
এরপর ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের চীন রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কেএনভির প্রথম ব্যাচে সংগঠনের শতাধিক সদস্যকে মণিপুরে প্রশিক্ষণে পাঠান। এরপর ১০০ সদস্যকে মণিপুর, বার্মার কারেন ও কাচিন রাজ্যে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। ২০২০ সালে কেএনভির নাম বদলে কেএনএফ হয়। তাদের সশস্ত্র উইংয়ের নাম দেয়া হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। এরপর থেকে সংগঠনটি নিজেদের অধিকার আদায়ের নামে গুম, খুন ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে পাহাড়ের পরিবেশকে অশান্ত করে তোলে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঢাকার বাসাবো এলাকার একটি ভাড়া বাসায় আট মাস ছিলেন কেএনএফ নেতা নাথান বম। আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ কুকি-চিন প্রধানকে বাসাটি ভাড়া করে দেন। বাসাটি ২০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, নাথান বম যখন চারুকলার ছাত্র, জামাতুল আনসারের নেতা শামিন মাহফুজ তখন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। সে সময় তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ