spot_img

আলীকদমে ভুল করে ট্রাককে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি

বান্দরবানের রুমা-থানচির পর বৃহস্পতিবার রাতে আলীকদমে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেলেও প্রকৃত অর্থে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। থানচি-আলীকদম সড়কের ডিম পাহাড়ের পাশে ২৬ মাইল নামক একটি চেকপোষ্টে সন্দেহভাজন একটি ট্রাককে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুঁড়েছিল। ওই ট্রাকটি থানচিতে যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার রাতে থানচির গোলাগুলির খবর পেয়ে ট্রাক চালকের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ওই এলাকায় বিদ্যুত চলে গেলে ট্রাক চালক কেএনএফ হামলা চালাতে পারে-এমন সন্দেহ থেকে ট্রাকের হেডলাইট বন্ধ করে গাড়ি চালাতে থাকেন। পাহাড়ী রাস্তায় ঘুঁটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ট্রাক চালক থানচির দিকে না গিয়ে পথ ঘুরিয়ে আলীকদম সড়কের দিকে গাড়ি চালাতে থাকেন। এর মধ্যে ২৬ মাইল এলাকায় রাত ১ টার দিকে অন্ধকারের মধ্যে চেকপোস্টে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হন। তিনি বুঝতে পারেননি যে সেটি পুলিশের চেকপোস্ট। অন্ধকারের মধ্যে তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো কুকি-চিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাকে গাড়ি থামাতে ইশারা দিচ্ছে। ট্রাক চালক তখন ট্রাকটি দ্রæত গতিতে চেকপোস্টের ব্যারিকেড ভেঙ্গে সামনের দিকে এগুতে থাকেন। পিছন থেকে ট্রাক লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলি ছুঁড়তে থাকেন। ট্রাক চালক তখন ট্রাকটি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে তিনি ও তার সহকারী লাফ দিয়ে বেরিয়ে পড়েন পাশের খাদে। এরই মধ্যে একদল পুলিশ ছুটে এসে দেখতে পায় যে সেটি ছিল একটি ট্রাক এবং চালক ও সহকারী ভয়ে পাশের খাদে আত্মগোপন করেছেন। এরপর পুলিশ ওই ট্রাক চালক ও সহকারীকে উদ্ধার করে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে কেএনএফের সশস্ত্র হামলার ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার থেকে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। কেএনএফ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলবে। পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল শুক্রবার বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন র‌্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন সাঁড়াশি অভিযানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সকলের সহযোগিতায় সন্ত্রাসীদের দমনে পাহাড়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, বান্দরবানের রুমা থেকে লুট হওয়া ১৪ টি অস্ত্র ও গোলা উদ্ধার না হলেও র‌্যাবের মধ্যস্থতায় গোয়েন্দা সহ যৌথবাহিনীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এবং কোনো প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে স্বাভাবিক ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে রুমার কোন স্থান থেকে কোন কৌশলে ম্যানেজারকে উদ্ধার করা হয়েছে গোপনীয়তার কারণে তা তিনি জানাননি।
যেভাবে ব্যাংক ম্যানেজার উদ্ধার ঃ
র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাব খবর পাওয়ার পর পরই অপহৃত ম্যানেজারকে নিরাপদে উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের রাতেই পাহাড় ও ঝিড়ি পথে ৬ ঘন্টা পায়ে হেঁটে সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়। তখন রাত তিনটা। ম্যানেজার নেজামকে নুডলস খেতে দেয়। নুডলস খেয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠার পর ডাল,ডিম পরটা খেতে দেয়। হেঁটে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা সংখ্যায় ছিল ১০-১২ জন। ম্যানেজারকে মাঝখানে রেখে হাঁটার কিছুদুর যাওয়ার পর পর সন্ত্রাসীদের দল বদল হয়ে যায়। একটানা ৩০ঘন্টা র‌্যাবের বিভিন্ন কৌশল অভিযানের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা মোটর সাইকেলে করে রুমার গহীন দুর্গম জঙ্গলে ম্যানেজারকে রেখে কেএনএফ সদস্যরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে র‌্যাব ম্যানেজারকে উদ্ধার করে। তিনি জানান, ব্যাংকের ভল্টের চাবি না দেয়ায় অপহৃত হন ম্যানেজার। অপহরণের সময় ম্যানেজারের ল্যাপটপও তারা নিয়ে যান। ল্যাপটপ থেকে সাইবার হামলার পরিকল্পনা ছিল সন্ত্রাসীদের।
তিনি জানান, সিসিটিবি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্ত্রাসীদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।ব্যাংক ডাকাতি, টাকা ও অস্ত্র লুট এবং অপহরণের মত ঘটনা ঘটানোর তাদের কয়েকটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে প্রথমত ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুট করে তাদের শ্রেষ্টতা ও সক্ষমতা প্রদর্শন, বিশে^ তাদের সহযোগীদের সক্ষমতা জানান দেয়া এবং তাদের সমর্থক ও প্রতিদ্বন্ধী সকল গোষ্ঠীগুলোকে দেখাতে চাইছে তারা শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী। সংবাদ সম্মেলন শেষে উদ্ধার হওয়া র‌্যাবের হেফাজতে থাকা রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন ও তার স্ত্রীসহ গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে হাজির করা হয়।
বান্দরবানে র‌্যাব-১৫ এর ক্যাম্পে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মাহবুবর রহমান, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনসহ র‌্যাবের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সোনালী ব্যাংক রুমা বাজার শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তার স্ত্রী মাইছুরা ইসফাত উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিরাপদে উদ্ধার হওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
থানচি বাজারে আতংক ঃ
বৃহস্পতিবার রাতে থানচি উপজেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনায় এলাকায় ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অনেকেই নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে থানচি বাজারে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। থানচির বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে। চারদিকে সাধারণ মানুষের চোখে মুখে আতংকের ছাপ দেখা গেছে। থানচি বাজারের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। টুরিষ্টদের সেরকম আনাগোনা ছিল না। সাঙ্গু নদীতে থানচি ঘাটে তেমন কোনো টুরিষ্ট দেখা যায়নি।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ