বান্দরবানের রুমায় মঙ্গলবার রাতে সোনালী ব্যাংক লুটের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই থানচি উপজেলায় দিন দুপুরে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও মোবাইল লুট করেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। কেএনএফের ২৫/৩০জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তিনটি চান্দের গাড়িতে করে শাহজাহানপুরের দিক থেকে এসে থানচি বাজারে প্রবেশ করে। তারা একটি চা দোকানে চা পান করে দুভাগে বিভক্ত হয়ে ফাঁকা গুলি করে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে ঢুকে পড়ে। দুটি ব্যাংকের ক্যাশে থাকা টাকা ও ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদের মোবাইলগুলো নিয়ে দশ মিটিটের মধ্যেই আবারো ফাঁকা গুলি করে বাজার থেকে বের হয়ে যায়। প্রথমে সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীর আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেয়। যাওয়ার সময় আবার সেগুলো তাদের হাতে দিয়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা কাউকে মারধর করেনি।
থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মামুন বলেন, সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক থেকে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত ১০টি মোবাইলও নিয়ে যায়। ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ব্যাংক দুটি পরিদর্শন করেছেন। কোনো মামলা হয়নি। ব্যাংকে ও থানচি বাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
থানচি বাজারের ৫শ গজের ভেতরেই রয়েছে থানচি থানা, বিজিবি চেক পোাস্ট ও বাজারের শেষ মাথায় সেনাবাহিনীর চেক পোস্ট। থানচি বাজারের কাছে থানচি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চৈত্র মাসের শেষের দিকে থানচি এলাকার আবহাওয়া প্রচন্ড গরম। এ কারণে পর্যটকের আনাগোনা একেবারে কম। চৈত্র সংক্রান্তি বা বৈসাবিতে পর্যটকদের ঢল নামে থানচিতে। এর আগেই মঙ্গলবার রাতে রুমা বাজারে সোনালী ব্যাংকে কুকি-চিনের হামলা ও অস্ত্র লুটের খবর ছড়িয়ে পড়লে থানচিতেও আতংক নেমে আসে। সকাল থেকেই স্থানীয়রা রুমা বাজারের ঘটনা নিয়ে কানাঘুষা করছিলেন। অনেকের মধ্যে ধারণা হয় যে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট থানচিতেও হামলা চালাতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে থানচি বাজারের শাজাহানপুরের দিক থেকে তিনটি চান্দের গাড়ি বাজারে প্রবেশ করে। তিনটি চান্দের গাড়িতে ২৫/৩০ জন যুবক ছিলেন। তারা একটি চায়ের দোকানে নেমে সবাই চা পান করেন। তাদের সবার হাতেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। চায়ের দোকানে কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যদের দেখে সবার মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে চা পান শেষ হলে হঠাৎ সশস্ত্র যুবকরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে থাকে। তারা দুই গ্রæপে ভাগ হয়। এক গ্রæপ প্রবেশ করে সোনালী ব্যাংকে, আরেক গ্রæপ যায় কৃষি ব্যাংকে। এসময় ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের হাত থেকে তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। ব্যাংকের ভিতরে কয়েকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর তারা ব্যাংকের ক্যাশ শাখা থেকে টাকা নিয়ে বের হয়। বের হওয়ার সময় অস্ত্র ও মোবাইল ফোনগুলো ফেরত দেয়। এরপর তারা তিনটি চান্দের গাড়িতে করে শাজাহানপুরের দিকে চলে যায়।
থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অং প্রæ ¤্রাে জানান, দুপুর ১টার দিকে থানচি সদরের শাহজাহানপুরের দিক থেকে তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। এরপর থানচি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে নগদ টাকা যা পেয়েছে তা নিয়ে চলে যায়। এরপর তারা আবার ওই তিন গাড়িতে করে শাহজাহানপুরের দিকে চলে।
সোনালী ব্যাংক বান্দরবান অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ ওসমান গণি জানান, গত মঙ্গলবার রুমা উপজেলায় এবং বুধবার থানচি উপজেলায় সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের শাখায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সব ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কুকি-চিন আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ বান্দরবানের রুমা ও থানচির তিন ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ইদানীংকালে আমরা দেখছি কুকি-চিন আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশ ও বিজিবি অভিযান শুরু করেছে। প্রয়োজনে হলে সেনাবাহিনীও অভিযানে যোগ দেবে। গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুকি-চিন যে গ্রæপটি রয়েছে, যারা আগেও বান্দরবানে একটি জায়গায় অবস্থান করে জামায়াতুল মুজাহিদীন আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামে একটি জঙ্গি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে। আমাদের র্যাব ও সেনাবাহিনী সেই ঘাঁটি সরিয়ে দিয়েছে। ইদানিং কুকি চীন আবার বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের যা যা করার, আমরা করবো। এখানে যারা জড়িত বা করেছে আমরা সবগুলোর ব্যবস্থা নেবো। সেখানে সরকারের যথেষ্ট পরিমান ফোর্স রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সেখানে পুলিশ ও বিজিবি রয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে সেনাবাহিনীও যাবে।
ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা: আইজিপি
মঙ্গলবার রাতে সোনালী ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির ঘটনার পর বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন যান। এ সময় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে তিনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমাদের লোকজনের উপর আক্রমণ হয়েছে, মসজিদে তারা আক্রমণ করেছে, আনসার ক্যাম্পে তারা আক্রমণ করেছে, পরবর্তীতে অস্ত্র নিয়ে গেছে। সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে নিয়ে গেছে। আমরা দেখছি, অস্ত্রগুলো কোথায় আছে খুঁজে দেখব। এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত এদের বিরুদ্ধে যথাযথ কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইজিপি যখন রুমা পরিদর্শনের কিছু সময় আগে থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায় একদল সশস্ত্র গোষ্ঠী। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা একটু আগেই বিষয়টি শুনেছি। আমরা সতর্ক ছিলাম বলেই তারা এসে পালিয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।