বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় হামলা চালিয়ে ভল্ট ভেঙ্গে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও ১৪ টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। অপহরণ করে নিয়ে গেছে ব্যাংকের ম্যানেজার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১ টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছিল। তবে অপহৃত ম্যানেজারকে উদ্ধার বা হামলাকারী কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্র দাবি করেছে, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল শতাধিক। তারা কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য। জানা গেছে, হামলাকারীরা ব্যাংক ও ইউএনও অফিসে কর্তব্যরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে তাদের কাছে থাকা ১৪ টি অস্ত্র নিয়ে যায়। এসময় তারা যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই মারধর করেছে। শুধু তাই নয় পাশে ইউএনও অফিসের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করেও আসবাবপত্র তছনছ করেছে।
রুমা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। তবে কত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় রুমা উপজেলায় বিদ্যুৎ ছিল না। নামাজে ব্যস্ত ছিলেন ব্যাংকের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ এবং কর্মচারীরা। ঠিক এই সময়ে
উপজেলা সদরের ব্যাথেল পাড়া এলাকা থেকে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে সোনালী ব্যাংকে হানা দিয়ে অস্ত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ওই এলাকায় যারা ছিল তাদেরকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। রুমা উপজেলা বাজার থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স এবং সোনালী ব্যাংকটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় সন্ত্রাসীরা এই সুযোগটি নিয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। তারা মনে করছেন, ঘটনাটি কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়ে থাকতে পারে। এর আগে এই সংগঠনটি ব্যাংক ডাকাতি করবে বলে এরকম একটি কথা রটিয়ে পড়েছিল এলাকায়।
রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈ বং মারমা দাবি করেছেন, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফ; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত তাদের প্রায় ১০০ সদস্য এই হামলায় অংশ নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সময় ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন পাশের একটি মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। তিনি ব্যাংকে গন্ডগোল হচ্ছে শুনে এগিয়ে যান। তখন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করছিলেন। নিজাম উদ্দিনের পরিচয় জেনে তারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানিয়েছেন, একটি সন্ত্রাসী দল ব্যাংকে হামলা করে টাকা এবং অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। তবে কত টাকা লুট করা হয়েছে এবং কোন সন্ত্রাসী দল এ বিষয়ে তিনি এখনো বিস্তারিত কিছু জানেননি।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম রাতে গণ্যমাধ্যমকে জানান, ‘রাত ৯টার দিকে তারা রুমা শাখায় হামলা করে। তারা বম পার্টির সদস্য হতে পারে শোনা যাচ্ছে। ম্যানেজারের খোঁজ এখনো পাইনি। আমরা কেবলমাত্র শুনলাম, চেষ্টা করছি তথ্য পেতে।’ এই শাখায় লেনদেন কম হয়, টাকার পরিমাণ তাই অনেক কম থাকে উল্লেখ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বান্দরবানের প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় শাখাটিতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা থাকে। ব্যাংকের নিজস্ব অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মীও ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসীদের হামলায় তারা টিকতে পারেনি।