রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চোর ও ছিনতাইকারীদের যোগাযোগ রাখে চক্রের সদস্যরা। পরে চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন কম টাকায় কিনে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর পরিবর্তন করে ফেলা হতো। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনে মাত্র ৩-৭ সেকেন্ড সময় লাগে চক্রের সদস্যদের। পরে সেগুলো বিভিন্ন দোকানের মাধ্যমে আবারো বিক্রি হয়ে চলে যায় জনসাধারণের হাতে। এভাবে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলায় চুরি ও ছিনতাই হওয়া ফোন উদ্ধার করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে এভাবে মোবাইলের আইএমইআই পাল্টে বিক্রি করে আসা পৃথক ৪টি চক্রের ২০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে।
গত সোমবার দিবাগত রাতে ধারাবাহিক অভিযানে ঢাকার গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- হাফিজুর রহমান, রনি আহমেদ ইমন, জসিম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আবুল মাতুব্বর, আহম্মদ আলী, কামাল, বাপ্পি, আবিদ হোসেন সনু, রবিন ভুইয়া, আরিফুল হোসেন, ইব্রাহিম মিয়া, সুজন, দেলোয়ার, আব্দুর রহমান, রাজু, জিহাদ হোসেন, মুনাইম, রাজু ও রফিক। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৪২টি স্মার্ট মোবাইলফোন, ৩৪১টি বাটন মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, ১টি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ৬টি চাকু, ১টি ল্যাপটপ, ১টি এলসিডি মনিটর ও নগদ ১১ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের অবৈধ মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের তৎপরতা বেড়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের হোতা।
চক্রটি চোরাই মোবাইলগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রæপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান, রবিন ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যান্যদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। তারা অন্যান্য ছিনতাইকারির কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল স্বল্পমূল্যে কিনে নেয়। গ্রেপ্তার দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে। তিনি আরো বলেন, দেলোয়ারের চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। আরিফুলের চক্র নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, আবুল মাতুব্বরের চক্র মোহাম্মদপুর এলাকায় ও ইমনের চক্রটি খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়। তারা আইএমইআই পরিবর্তনের পাশাপাশি কখনো কখনো মোবাইলের ক্যাসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। এসব ফোনের ব্র্যান্ড এবং কোয়ালিটিভেদে দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে। আর অন্য মোবাইল বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় করে আসছিল।
গ্রেপ্তার দেলোয়ারের সহযোগী রাজু এবং জিহাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আরিফুলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া, মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল আগেও র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তারা জেল থেকে বেরিয়ে আবারো এই চক্রে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।