প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন ও ৪ সদস্যসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক ফরিদ উদ্দিন পাটোয়ারী বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম.এ. কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের কতিপয় সদস্যের অনুমোদনের মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯ হাজার ৯৭ ডেসিমাল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত হিসেবে অপরাধজনকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্তে¡ও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরে বিক্রেতার নিকট থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। এরপর নিজেরা উক্ত এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। আসামিরা সরকারি অর্থ আত্মসাত করে নিজেরা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং উক্ত বেআইনি কার্যক্রম করার ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কমিশন বা ঘুষের আদান প্রদান করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, আত্মসাতের অর্থ হস্তান্তর স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদের আসামি করা হয়েছে। এর বাইরেও তদন্তকালীন কারও বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে আসামির সংখ্যা বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী-স্বজনদের চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয় ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।