spot_img

কারিগরি বোর্ড, টাকার বিনিময়ে ৫ হাজারেরও বেশি সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামান

বিপুল পরিমাণ অবৈধ সনদ ও মার্কশিট তৈরির সরঞ্জামসহ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আটক সিস্টেম অ্যানালিস্টের নাম প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামান। বহুদিন ধরে অবৈধ সনদ আর মার্কশিট বানিয়ে সেসব শিক্ষাবোর্ডের অনলাইনে আপলোড করতেন তিনি।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুরের মধ্যে রাজধানীর আগারগাঁও এবং পীরেরবাগে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ বিক্রি করে আসছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট ও সার্টিফিকেট তৈরির সরঞ্জামসহ শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ বিক্রি করে আসছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির সার্ভার তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকায় অনলাইনেও এসব সার্টিফিকেটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শামসুজ্জামান রাতের অন্ধকারে বোর্ড থেকে বø্যাংক সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের মুল কাগজ চুরি করো। পরে তার নিজস্ব বাসায় স্থাপন করা কারখানায় সেগুলো প্রিন্ট করতো। পরে শিক্ষার্থীর কাছে বিক্রি করতেন। এই সার্টিফিকেটগুলো অনলাইনে আপ করতো। যাতে বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে যাচাই করলে এটি জেনুইন সার্টিফিকেট তার প্রমান মিলতো।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শামসুজ্জামান উচ্চ পদস্থ তৃতীয় বা চতুর্থ বেতন গ্রেডর কর্মকর্তা। যার কাছে রাষ্ট্র অথরিটি দিয়েছে, সনদ অনলাইন করা। এটা বড় দায়িত্ব। অথচ সে এভাবে প্রতারনা করেছে। অছাত্র বা ঝরে পড়া ছাত্রদের যে কাউকে যে ইচ্ছে করলেই জিপিএ-৫ বা তার চেয়েও বেশি দিয়ে দিতে পারবো।

তার এই কাজে বোর্ডের অন্য কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার এই প্রতারণার সংবাদ দেখনোর পরও সে বহাল তবিয়তে ছিল। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তার পক্ষে ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কথা বলে। তার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকতে পারে। নইলে কিভাবে চোখবুঝে থাকে তারা । তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো।এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা জানতে তদন্ত চলছে।
একেএম শামসুজ্জামান পুলিশের কাছে বলেছেন বোর্ডের আরেক সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুল আলম তাকে এই কাজ শিখিয়েছে এবং বোর্ডের আরো অনেক কর্মকর্তাকে এই টাকার ভাগ দিতেন। শামসুজ্জামান স্বীকার করেছেন, এভাবে তিনি ৫ হাজারেরও বেশি সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন।
এর আগেও নানা অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন শামসুজ্জামান। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় তিনি আবারো বহাল তবিয়তে আছেন বলে বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গ্রেফতার হওয়া প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানের সই করা অফিস আদেশে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে রবিবার (৩১ মার্চ) দিনগত মধ্যরাতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামানকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এমতাবস্থায় তাকে সরকারি চাকুরির আইন, ২০১৮-এর ৩৯(২) ধারা মোতাবেক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ আদেশ ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। তিনি বরখাস্তকালীন সময়ে বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন।
অন্যদিকে অবৈধ সনদসহ গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত আরো অনেকেই আছে বলে আমাদের ধারণা। সেগুলো সব তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ