spot_img

নড়াইল হয়ে যশোর গেল ট্রেন

শনিবার সকাল ৮ টা ৪০ মিনিট। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দৃষ্টিনন্দন বামনকান্দা রেল জংশন। ৬৫১৩ সিরিজের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) প্রস্তুত। ইঞ্জিনের সামনে জাতীয় পতাকা টানানো। লোকমোটিভ মাস্টার আব্দুল মান্নান। ট্রেনের পরিচালক বাঁশি ফুকিয়ে পরিচালনার সিগন্যাল দিলেন। ধীরে ধীরে ট্রেনটি হুইসেল দিয়ে স্টেশন ত্যাগ করতে থাকে। এটি পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের প্রথম দিনের দৃশ্য। শনিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে ছাড়া মালবাহী ট্রেনটি সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। প্রায় ১০ মিনিট এই স্টেশনে অবস্থান করে। এরপর আবার ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। একইভাবে বেলা ১২টার দিকে যাত্রীবাহী ট্রেন ভাঙ্গা-যশোর রুটে যাত্রা করে। দুপুর দেড়টার দিকে যশোর ঘুরে ফের ভাঙ্গায় ফিরেছে ট্রেন। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ভাঙ্গা-যশোর প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হলো। একই রুটে আজও (রবিবার) চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন।
ভাঙ্গা রেলষ্টেশন মাষ্টার জিল্লুর রহমান জানান, শনিবার সকালে পরীক্ষামুলক ট্রেনটি যশোরের রূপদিয়া রেল ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আজকের পর আগামীকাল ৩১ মার্চ সকালে আবারো ট্রেনটি ভাঙ্গা হতে যশোরের উদ্দেশ্যে যাবে। আজ বেশ কয়েকবার ট্রায়েল শেষে ট্রেনটি ভাঙ্গাতে অবস্থান করবে।
যশোর অফিস জানায়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রæপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এর অনুমোদন হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ এ রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে শনিবার ও রবিবার দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হবে।
পরীক্ষামূলক ট্রেনের চালক আব্দুল মান্নান বলেন, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে আসি। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছেছি। ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দিয়েছেন তারা।
ভাঙ্গা-যশোর অংশের ট্র্যাক ইনচার্জ আনোয়ারুল কবির জানান, ‘নতুন এ ট্র্যাক করা হয়েছে চীনা প্রযুক্তিতে। ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিটের ¯িøপার। এটি টেকসই যেমন, তেমনি আবার মেনটেনেন্স কস্টও অনেক কম হবে।’ আর ট্র্যাক ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাফওয়ান হোসাইন রাতুল বলেন, ‘পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক নতুন এ রেললাইন দেশের রেল নেটওয়ার্ককে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে।’
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, আগামী জুন বা জুলাইয়ে মধ্যেই নতুন রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তদারকিতে চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রডগেজ এ নতুন রেললাইন স্থাপন করে। পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাদের দাবি এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নতুন রুট চালু হলে কম সময়ে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহন সহজ হবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পাবে নতুন গতি। স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল খান বলেন, পদ্মাসেতুর রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিপ্লব ঘটলো। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে। সহজেই যাতায়াত করতে পারবো।
যশোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, এই ট্রেন যশোরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদের উপহার। পণ্যবাহী (পাথর) ট্রেনটি ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে যশোরে আসে। যাওয়ার সময় আরও বেশি বেগে গিয়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের গতি ১০০-১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরীক্ষা করা হবে। দুইদিনের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের পর আগামী জুন মাস নাগাদ এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ