spot_img

‘ডিভোর্স দিয়ে অভিযোগ তুলে না নিলে পরিনতি হবে ভয়ংকর’

জয়দেবপুর থানার সাবেক ওসি মিজানের হুমকি

পুলিশ সুপারের অফিসে কাজী ডেকে জয়দেবপুর থানার ওসির দ্বিতীয় বিয়ের পর এখন ডিভোর্সের জন্য চাপ দিচ্ছে অভিযুক্ত সাবেক ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম। দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে রাজি নয় সাবেক ওসি। এজন্য ৫ লাখ টাকার অফারও দিয়েছেন মিজান। এই টাকা নিয়ে যেন মিজানকে ডিভোর্স দেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এ নিয়ে মিজান ও ঝর্ণা আক্তারের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে বলা হয়, ‘ডিভোর্স দিয়ে অভিযোগ তুলে না নিলে পরিনতি হবে ভয়ংকর। আমি তিনটি প্রশ্ন করব। এক. আমাকে ভালোবাস কি না, দুই. সারা জীবন আমার সাথে থাকতে চাও কি না, ৩. আমার কথা মত চলবা কিনা’। উত্তর হ্যাঁ হলে এবং আমাকে পেতে হলে তোমাকে একটু অভিনয় করতে হবে। ‘আমারা সুখে সংসার করছি, ভাল আছি’ বলে এসপি স্যারের কাছে করা তোমার অভিযোগটা তুলে আনতে হবে’।
গত ১৮ জানুয়ারি গাজীপুরের একটি রিসোর্ট থেকে কলেজ ছাত্রীসহ আটক করা হয় জয়দেবপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামকে। পরে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ওই রাতে কাজী ডেকে ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের সঙ্গে কলেজ ছাত্রী ঝর্ণা আক্তারের বিয়ে করিয়ে দেয়া হয়। এরপর ওসি মিজানকে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। সৈয়দ মিজানুর ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করতে গাজীপুর জেলা পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর থেকে সাবেক ওসি মিজান মরিয়া হয়ে পড়েন। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে মানতে নারাজ। দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে মিজান ও ঝর্ণা আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনের কথোপকথনের বেশ কয়েকটি রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
বিয়ের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও একদিনের জন্যও দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ করেননি ওসি মিজান। উল্টো ৫ লাখ টাকা নিয়ে মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতা ও মানিকগঞ্জ জেলা সদরের কুমুল্লী হাটিপাড়া গ্রামের জনপ্রতিনিধি দিয়ে ক্রমাগত ডিভোর্সর চাপ দিচ্ছেন। গত ২৩ ফেব্রæয়ারি মানিকগঞ্জ শহরে এক রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে সালিশ বসায়। কিন্তু সালিশে সিদ্ধান্ত হয় যে মিজানকে দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য মানিকগঞ্জে বাড়ি ভাড়া করে দিতে হবে এবং যাবতীয় ভরপোষণ বহন করতে হবে। এর পরপরই মিজান তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে ঝর্ণা আক্তার বলেন, সেখানে গিয়ে দেখি ওসি মিজান, তার প্রথম স্ত্রী ও শ্যালক বসা। নেতার সামনে ওসি মিজান বলেছেন আমি ও গাজীপুরের পুলিশ কর্মকর্তারা মিলে ট্র্যাপে ফেলে তাকে বিয়ে করেছি। সে সংসার করবে না। ৫ লাখ টাকা নিয়ে তালাক দিতে হবে আমাকে।
‘জয়দেবপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হতে চেয়েছিল ওসি। এ কারণে সে সার্কেল এএসপি স্যারকে আমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে। আর জয়দেবপুর সদর থানা তো মিল কলকারখানা এলাকা। এখানে যাবতীয় ঝুট, কলকারখানার চাঁদার টাকা নিয়ন্ত্রন করত আগের —–। এখন নতুন —- এসেছে। আর ওই থানাটা ভাল থানা ছিল। ওসি (তদন্ত) মনে করেছে যে এই ওসি থাকলে তো আমি ঝুট ব্যবসা ও কারখানার চাঁদার টাকা নিতে পারব না। এ কারণে ওসি (তদন্ত) এক জোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটা ঘট পাকিয়েছে।’ মিজান ও ঝর্ণা আক্তারের মধ্যে মোবাইল ফোনের কথোপথনের রেকর্ড।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড হওয়া ইন্সপেক্টর সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, আমি দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করছি। তাকে মানিকগঞ্জে একটি বাসা ভাড়া করে যাবতীয় ভরপোষণ বহন করছি। কিছুদিন আগেও আমি তার সাথে দেখা করে এসেছি। আমার দ্বিতীয় স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোঃ ছানোয়ার হোসেনের কাছে ঝর্ণা আক্তার লিখিত অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, ইন্সপেক্টর সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, ‘ওই অভিযোগ মিথ্যা। এরকম কোনো অভিযোগ পড়েনি।’
মানিকগঞ্জ জেলা সদরের কুমুল্লী হাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সৈয়দ মিজানুর ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার বলেন, আমার জীবন বিষিয়ে তুলেছে ওসি মিজান। মরণ ছাড়া সামনে আর কোন পথ দেখছি না। বিয়ের পর তিনি একদিনের জন্য ভরণ-পোষণ করেননি। তালাক দিতে ফোন করে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছেন। লেলিয়ে দিয়েছেন ক্যাডার বাহিনী। তার ক্যাডার আলিম ও নবীন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মানিকগঞ্জে থাকতে হলে ওসি মিজানকে ডিভোর্স দিতে হবে। তা না হলে লাশ পড়বে। সেটা আমারও হতে পারে। আমার অসুস্থ মা-ও হতে পারে। ভয়ে গ্রামে থাকতে পারছিনা। পালিয়ে ঢাকায় এসেও স্বস্থিতে নেই।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ