বাংলার ক্রিকেটে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। সবুজ গালিচার প্রান্ত জুড়ে কেবল হতাশার আলপনা! জাতির কোটি কোটি ভক্ত আজ ক্ষোভে দিশাহারা, তবুও লজ্জায় নুয়ে পড়া মাথা প্রহর গণনায় রত। এই মুহূর্তে কে দেবে আশা, কে দেবে ভরসা, কে শোনাবে জাগরণের অভয় মন্ত্রবাণী, কে রোধ করবে এমন পরাজয়! বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে কথা বলার অনুরোধ করলে হয়তো এমনটাই বলতেন। হয়তো কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন সেটিকে বিনোদনের খোরাক বানাতেন। একদিকে নাজমুল হোসেন শান্তরা ও অন্যদিকে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা যা করছেন, তাতে এর থেকে ভালোভাবে বলার উপায় হয়তো নেই। ক্রিকেট বিনোদনের একটি অংশ। শান্ত-জ্যোতিরা বিনোদনই দিচ্ছেন। কিন্তু সেটি হোক বিনোদন কিংবা যুদ্ধের লড়াই, পরাজিতদের কেউ মনে রাখে না, স্মরণ করে না। ক্রিকেট পাগল বাঙালি তাদের জয় উদযাপন করতে চায়, অপেক্ষা করে কাঁধে কাঁধ রেখে সমানে-সমান লড়াইয়ের। কিন্তু এমন হতাশার হার, লড়াইয়ের আগেই আত্মসমর্পণের মানসিকতা হৃদয়ের রোরুদ্যমান দশা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।
কোটি কোটি টাকা খরচ করে চান্ডিকা হাথুরুসিংহে ও হাসান তিলকরতেœদের রেখেছে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তার ফল হিসেবে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়া, অন্যদিকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাদেরই দেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগারদের লড়াইয়ের আগে হেরে যাওয়া দেখতে হয়। গতকাল সিলেটের লাক্কাতুরায় সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে বড় ব্যবধানের হার দেখেছে টাইগার বাহিনী। ম্যাচটির দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের রান হয়েছে ৩৭০। অথচ দুই ইনিংসে কামিন্দু মেন্ডিস ও লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভার রান ৪৭৬। অর্থাৎ তারা দুজনে যা করেছে এই ম্যাচে পুরো বাংলাদেশ দল তার চেয়েও ১০৬ রান কম করেছে। হাথুরুসিংহের শিষ্যরা টেস্ট হেরেছে শোচনীয়ভাবে। এর ব্যাখ্যা কী রয়েছে লঙ্কান মাস্টারমাইন্ডের কাছে? পুরুষ ও নারী দল যেন সমানভাবেই হারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! নারীদের হারের বিষয়ে বোলিং কোচ দিনুকা হেত্তিয়ারাচ্চির কাছেও নেই কোনো ব্যাখ্যা। হয়তো হাথুরুর কাছে পুরুষ দলের হারেরও ব্যাখ্যা নেই। নাজমুল হোসেন শান্ততো বলেই দিয়েছেন হারের পরের সাধারণ ও বহুল পরিচিত কথা, এখান থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে দেবে। সেই কাজে দেওয়ার কাজটি সুদূর ভবিষ্যৎ নাকি নিকট ভবিষ্যৎ, তাও অজানা।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট শুরু হয়েছিল গেল ২২ মার্চ। ব্যাটিংয়ে নেমেই লঙ্কানরা দেখেছিলেন ভয়াবহ ধস। অস্ট্রেলিয়ান বল কোকাবুরার কাজই সেটি। বাংলাদেশও সাক্ষী হয়েছে এই ধসের। তবে দুই দেশের ছেদ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন ধনঞ্জয়া ও কামিন্দু। দুই ইনিংসেই লঙ্কানদের ত্রাণকর্তা হয়ে এসেছেন এই দুই ক্রিকেটার। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরে ধনঞ্জয়া-কামিন্দু জুটিতে ভর করে ২৮০ রান করে অতিথিরা। দুজনেই খেলেন ১০২ রানের ইনিংস। এরপরে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিক বাংলাদেশ ১৮৮ রানেই বোতলবন্দি হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে আবারো ধস দেখেন লায়নরা। এবারো ধনঞ্জয়ার ১০৮ রান ও কামিন্দুর ১৬৪ রানে ভর করে দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪১৮ রান। তাতে শ্রীলঙ্কা টাইগারদের সামনে ৫১১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়। জবাবে ১৮২ রানে কুপোকাত বাংলাদেশ। ফল হিসেবে একদিন হাতে থাকতেই ৩২৮ রানে জয়ী লঙ্কান বাহিনী। তাতে সাজঘরে কেক উৎসবও করেছেন ধনঞ্জয়ারা। করবেনই না কেন, এমন জয় দলটি বাংলাদেশের বিপক্ষে পেয়েছিল সেই ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে। সেবার অবশ্য ৪৬৫ রানে জিতেছিল মাহেলা জয়াবর্ধনে বাহিনী। তারপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এটি। এখানে আবার মাইলফলকও রয়েছে। টেস্ট ইতিহাসে শ্রীলঙ্কান প্রথম অধিনায়ক হিসেবে পরপর দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ধনঞ্জয়া। একই ম্যাচের দুই ইনিংসে জোড়া ক্রিকেটারদের জোড়া সেঞ্চুরি পেয়েছেন তৃতীয়বারের মতো। এতকিছুর বিপরীতে শান্তদের কেবল অভিজ্ঞতা নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছে। বাংলাদেশ নাহিদ রানার অভিষেক ও ৫ উইকেট কিংবা মমিনুল হকের লড়াইটুকুই পেয়েছে। এবার চোখ চট্টগ্রাম টেস্টে, যেটি মাঠে গড়াবে আগামী ৩০ মার্চ। চোখ রয়েছে মিরপুরে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া নারীদের ওয়ানডেতেও। দুই শোচনীয় হারের পরে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন আগামীকাল সকাল সাড়ে ৯টায়।