শ্রম আইন লংঘনের মামলায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের কারাদন্ডের রায় স্থগিত করে দিয়েছিল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের এমন আদেশ বাতিল প্রশ্নে জারিকৃত রুল গতকাল সোমবার যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, ফৌজদারি মামলার রায়ে দুটো অংশ রয়েছে। একটি সাজা (দোষী সাব্যস্তকরন) এবং অপরটি দন্ড। সাজা কখনো স্থগিতের সুযোগ নাই। তবে দন্ড স্থগিত করতে হলে আপিল আদালতকে উপযুক্ত কারন ব্যাখ্যা করতে হবে। কিন্তু ড. ইউনূসসহ চারজনকে শ্রম আদালতের দেওয়া সাজা ও দন্ডের রায় স্থগিত করে দেয় আপিল ট্রাইব্যুনাল। দন্ড স্থগিত করলেও আপিল ট্রাইব্যুনাল কোন কারন ব্যাখ্যা করেনি। এ কারনে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে এ সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করা হলো।
এদিকে ড. ইউনূসসহ চার আসামির করা আপিল দ্রæত নিষ্পত্তি করতেও আপিল ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ স্থগিত থাকবে।
শ্রম আইন লংঘনের মামলায় ড. ইউনূসসহ চার আসামিকে ৬ মাসের কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের দন্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন পান দন্ডিতরা। গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নথি তলব করেন। এছাড়া ৩ মার্চ পর্যন্ত শ্রম আদালতের রায় স্থগিত করে দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। গত ৫ ফেব্রæয়ারি হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেন। রুলের উপর দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল এ রায় দেয় হাইকোর্ট। আদালতে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও ড. ইউনূসের পক্ষে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও খাজা তানভীর আহমেদ শুনানি করেন।
বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত:
ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্যের ক্ষেত্রে বিদেশী ক‚টনীতিকদের সতর্ক থাকা উচিত। ড. ইউনূসের মামলার শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূসের মামলা ও বিচার নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাসের একটি বক্তব্য আদালত অবমাননাকর উল্লেখ করে তা হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আদালত বলেন, কোনো রাষ্ট্রদূত যদি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আদালত অবমাননামূলক বক্তব্য দেন সেক্ষেত্রে আদালত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কি না? আইনজীবী বলেন, আদালত কোনো রাষ্ট্রদূত বা ক‚টনীতিকের বিরুদ্ধে কনটেম্পট প্রসিডিং ড্র করতে পারেন না এবং তলব করতে পারেন না। তবে পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন। আদালত বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে ক‚টনীতিকদের সতর্ক থাকা উচিত।