রোজা কেন্দ্র করে আরেক দফা বেড়েছে ফলের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০-৬০ টাকা। রোজার আগের বাড়তি দামের সাথে রোজা শুরুর পর বাড়তি দাম যোগ হয়ে নাগালের বাইরে অনেক ফল। বেড়ে যাওয়া দামের পুরোটাই বহন করছেন ভোক্তারা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন ফল। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। ফলের পাইকারি, খুচরা সব ধরনের বাজারেই মনিটরিংয়ের অভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিমুনাফালোভী চক্র অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে ভোক্তারা জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমদানিকারক পর্যায়ে মাল্টা ও কমলা ১৫ কেজির কার্টুন চার হাজার টাকা। ১৫ দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬’শ টাকায়। আর এক মাস আগে ১৫ কেজির মাল্টার কার্টুন বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকায়।
বুধবার পাইকারি দোকানে দেখা যায়, চায়না ক্লাস-টু আপেল ২০ কেজি কার্টুন বিক্রি হচ্ছে ৩,৩০০ থেকে ৩,৪০০ টাকায়। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চায়না আপেল বিক্রি হচ্ছে ৪,৫০০ থেকে ৪,৭০০ টাকা। একইভাবে ৯ কেজি কার্টুনের নাশপতি বিক্রি হচ্ছিল ১,৯০০ থেকে ১,৯৫০ টাকা। ১৫ দিন আগে নাশপতির দাম ছিল ১,৭০০-১,৭৫০ টাকা। চায়না ম্যান্ডারিন ৮ কেজির কার্টুন বিক্রি হচ্ছে ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকায়। আঙুর ও আনার পুরোটাই আসে ভারত থেকে। কেজিতে ১২ দানার সাড়ে ১৯ কেজি আনার কার্টুনপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল ৫,০০০ থেকে ৫,৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও কার্টুনপ্রতি এক হাজার টাকা কম ছিল। মার্চের শুরুতে এসব আনারের দাম ছিল ৪,০০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা।
পাইকাররা বলেন, ‘আমদানিকারকের কাছ থেকে কিনে আড়তদার ব্যবসায়ীরা সব ধরনের খরচসহ প্রতি কার্টুনে ৫০ টাকার বেশি নেয় না। এতে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যেতে কেজিতে দেড় থেকে সর্বোচ্চ তিন টাকা বাড়তে পারে। আমদানিকারকের বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে খুচরা দোকানিদের বিক্রি করা ফলের দামে। রমজানের শুরুতে এক সপ্তাহ আগের চেয়ে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মাল্টা ৩৫০-৩৮০ টাকা, আপেল আফ্রিকান প্রিমিয়াম ৩০০-৩২০ টাকা, চায়না আপেল ২৫০-২৭০ টাকা, নাশপতি ২৬০-২৮০ টাকা, কমলা ও ম্যান্ডারিন (ছোট কমলা) ২৫০-২৬০ টাকা, আঙুর ৩০০-৩২০ টাকা, আনার ৩৮০-৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মরিয়ম, মেডজুল, আজওয়া, মাবরুম খেজুর ১,১০০ থেকে ১,৪০০ টাকা, দাবাস, নাগাল জাতের খেজুর ৬০০-৮০০ টাকা, জাইদি-ফরিদি জাতের খেজুর ৩০০-৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নানান জাতের কারণে খেজুর কেনায় মান ও দামে ঠকতে হয় ক্রেতাদের।
খুচরা ফল বিক্রেতা আলতাব বলেন, ‘পাইকারিতে কার্টুন কার্টুন বিক্রি হয়। খুচরাতে কেজি হিসেবে বিক্রি করি। একজন শ্রমিকের বেতন দিনে ৮০০-১,০০০ টাকা। দোকান ভাড়া, কর্মচারী খরচ, পরিবহন ব্যয় হিসেব করলে আমরাও তেমন লাভ করতে পারি না। দাগ পড়া কিংবা পঁচা ফল কেউ নেয় না। যে কারণে খুচরাতে দাম একটু বেশি হয়।’
এদিকে রমজানের প্রথম দিনে ছয় প্রতিষ্ঠানকে ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রমজানে তরমুজ, খেজুর ও ফলের দাম বেশি রাখার দায়ে এসব জরিমানা করা হয়। পবিত্র রমজান মাসে ফলের চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। তারা চড়া দামে আমদানি করা খেজুরসহ আমদানিকৃত ফল, তরমুজ ও সব্জি বিক্রয় শুরু করেছে।