শান্তর অপরাজিত ১২৯ বলে ১২২ রানের ইনিংসের উপর ভর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে অবশেষে সহজ জয়ই পেয়েছে বাংলাদেশ। লঙ্কানদের ২৫৫ রানের জবাবে ৬ উইকেট আর ৩২ বল হাতে রেখেই সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে টাইগাররা।
এদিন দুর্দান্ত জুটি করে দারুণ একটি রেকর্ড করেছেন শান্ত ও মুশফিক। লঙ্কানদের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে তাদের গড়া ১৩১ রানের জুটিটি এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ১১১ রানের জুটি ছিল মুশফিক ও সাব্বির রহমানের।
বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে দারুণ এক হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। ৮৪ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে শান্তর সঙ্গে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন তিনি।
এর আগে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে গেছেন ওপেনার লিটন দাস। বাঁহাতি লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার গুড লেন্থে করা বল ডিফেন্ড করতে গেলে ব্যাটের কানায় লাগে লিটনের। সেই বল উপড়ে ফেলে লিটনের লেগ স্টাম্প। গোল্ডেন ডাক মেরেই সাজঘরে ফেরত যান বাংলাদেশ ওপেনার।
নাজমুল হোসেন শান্ত আরো একবার প্রমাণ করলেন নিজেকে। অধিনায়ক শান্ত কিংবা ব্যাটসম্যান শান্ত, উভয়ক্ষেত্রে সফল বাংলাদেশের কাপ্তান। সিলেটের মাটিতে হতাশার টি-টোয়েন্টি সিরিজ কাটলেও ওয়ানডে হয়েছে মনের মতো। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শান্ত ছাপিয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার জয়-পরাজয়ের ওপরে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেভাবে শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা তার পাল্টা জবাব শান্ত একাই দিয়েছেন। বোলিং ইনিংসে নেতৃত্ব দিয়ে এবং ব্যাটিং ইনিংসে ব্যাট হাতে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে অনেকেই অধিনায়কের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার জবাব ওয়ানডে সিরিজের শুরুতেই দিলেন শান্ত।
গতদিন শ্রীলঙ্কা উড়ন্ত শুরু করলেও অধিনায়কের নেতৃত্বগুনে বোলারদের সহায়তায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে তানজিম হাসান সাকিব যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, সেটি ছিল অনবদ্য। অধিনায়কের কৌশল বুঝে বল করে সফলতা পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামরা। তিন পেসারের দখলে গেছে লঙ্কানদের ৯ উইকেট। বাকি একটি উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শ্রীলঙ্কা ইনিংসের শুরুতে ঝোড়ো ব্যাটিং করলেও বাংলাদেশি পেসারদের দাপটে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে। তবে স্রোতের বিপরীতে ছিলেন অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ও জেনিথ লিয়ানাগে। ৭৫ বলে ৫৯ রান করে ফেরেন কুশল এবং ৬৯ বলে ৬৭ করেন লিয়ানাগে। শেষ পর্যন্ত এই দুজনের রানে ভর করে শ্রীলঙ্কা করে ২৫৫ রান।
দেখেশুনে খেললে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ২৫৬ রান তুলতে বেগ পেতে হয় না। সেটিও আবার ঘরের মাটিতে। কিন্তু জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমেই লিটন দাস যা করেছেন, সেটি কোনোভাবেই যেন মানা যায় না। দিলশান মাদুশঙ্কার গুড লেংথের বলটি ব্যাটে নিতে গিয়ে ভুল করে বসেন বাংলাদেশি ওপেনার। বাড়তি বাউন্সকে মোকাবেলা করতে গিয়ে লিটন পুরোপুরি পরাস্থ হন। ব্যাট ছুঁয়ে বল গিয়ে সরাসরি আঘাত করে স্ট্যাম্পে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রানের খাতা শূন্য রেখেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। একবারে গোল্ডেন ডাক! ক্যারিয়ারে ডানহাতি এই ব্যাটার এর আগে এমন আউট হয়েছেন পাঁচবার। আর একবার প্রথম বলে আউট হলেই ছুঁয়ে ফেলবেন হাবিবুল বাশারের লজ্জার রেকর্ড। লাল-সবুজের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোল্ডেন ডাক মারা ব্যাটসম্যান হাবিবুল বাশার। তিনি সাতবার এমন আউট হয়েছিলেন। এ দিকে ২০২৩ সাল থেকে লিটন পাওয়ার প্লেতে হতাশ করে আসছেন। এই সময়ের মধ্যে ২৬ বার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬ বারই ব্যর্থ হয়েছেন। তাতে বাংলাদেশের চিন্তা কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দিয়েছেন ২৯ বছর বয়সি এই ব্যাটসম্যান। লিটনের মতো গতদিন হতাশ করেছেন সৌম্য সরকার ও তাওহীদ হৃদয়। ৯ বল খেলে মাত্র ৩ রান করে সেই মাদুশঙ্কার বলেই সাজঘরে ফেরেন। দলীয় ১৪ রানে সৌম্যর আউট বাংলাদেশের ওপরে বড় ধরনের চাপ তৈরি করে। টি-টোয়েনিতে বলার মতো রান না করলেও দলের জন্য শুরুতে দারুণ ভ‚মিকা রেখেছিলেন সৌম্য। সেজন্য তানজিদ হাসান তামিমকে একাদশে না নিয়ে সৌম্যকেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাট হাতে তার প্রমাণ রাখতে পারেননি। যদিও বল হাতে কিছুটা ভ‚মিকা রেখেছেন তিনি। কিন্তু দলের উদ্বোধনী জুটিতে তার ব্যাট থেকে কিছু রান আসলে স্বস্তিতে থাকত বাংলাদেশ।
লিটন-সৌম্যর মতো খেয়ালি ইনিংস খেলেছেন তাওহীদ হৃদয়ও। বলের লাইন বুঝতে পারলেও ব্যাট নামাতে দেরি করে ফেলেছিলেন। তাতে প্রমোদ মাদুশানের করা গুডলেংথের বলটি সোজা গিয়ে আঘাত হানে উইকেটে। ২৩ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। রিয়াদ ৩৭ বলে ৩৭ রান করে আউট হলেও লঙ্কান অধিনায়ককে জবাব দিয়ে শান্তও ব্যাট চালিয়ে গেছেন। লঙ্কানদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহও ছাড়িয়ে যেতে বেগ পেতে হয়নি টাইগার দলপতির। তার ব্যাটের সঙ্গে হেসে ওঠেন বাংলাদেশের কোটি কোটি ভক্ত।