spot_img

বাংলাদেশের জাহাজ নিয়ে ধীর গতিতে এগোচ্ছে সোমালিয়ার দিকে

আরব সাগরে প্রায় একশ’ সোমালিয়ার সশস্ত্র জলদস্যু আক্রান্ত বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ গতকাল বুধবার অত্যন্ত ধীর গতিতে সোমালিয়ার উপকূল অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল। জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী জাহাজটির গতিবিধির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। জাহাজটিতে মোজাম্বিক থেকে দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য বোঝাই ৫৫ হাজার টন কয়লা টানা অসতর্কতায় জাহাজে মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বলেও আশংকা ব্যক্ত করেছেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায় গতকাল পর্যন্ত কোনো ধরনের মুক্তিপণের দাবি জানায় নি জলদস্যুরা।
জাহাজটিতে জিম্মি হয়ে পড়া ২২ জন ক্রু ও নাবিকের মোবাইল ফোন জলদস্যুরা নিয়ে নেয়ায় এবং জাহাজের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ জলদস্যুদের হাতে চলে যাওয়ায় গতকাল বুধবার জাহাজটি থেকে কার্যত কোনো ধরনের মোবাইল অডিও এবং রেডিও বার্তা জিম্মিরা পাঠাতে পারেন নি।
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর সূত্র জানায় গত মঙ্গলবার আরবে সাগওে জাহাজটি ছিনতাইয়ের সময় সোমালিয়া উপকূল থেকে এর দূরত্ব ছিল ৫৫০ নটিক্যাল মাইল। গতকাল দুপুর নাগাদ এই দুরত্ব কমে দাঁড়ায় ৪৮০ নটিক্যাল মাইল। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন জাহাজটি ধীর গতিতে সোমালিয়ার উপকূল বরাবরে নিয়ে গিয়ে নিজেদেরকে স্থির করে এরপর যোগাযোগের চেষ্টা করবে।
জাহাজটিতে বাণিজ্যিক পরিবহনের জন্য ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা থাকায় এইসব কয়লা থেকে নিঃসৃত মিথেন গ্যাস ব্যবস্থাপনার যে কোন অনিয়মে জাহাজটি ভাসমান বোমায় পরিণত হতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করেছেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার জাহাজ থেকে প্রেরিত এক অডিও বার্তায় একজন নাবিককে এব্যাপারে বিশেষজ্ঞ সহায়তা চেয়ে আকুল আবেদ জানাতেও দেখা গেছে। তবে গতকাল সারাদিন জাহাজ থেকে আর কোনো ধরনের সারাশব্দ মেলেনি।
গতকাল সারাদিন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কেএসআরএম-এর সহযোগী ও জাহাজটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আরএস শিপিংয়ে ভিড় করে নাবিকদের উদ্বিগ¦ আত্মীয়-স্বজন। তারা দ্রæত নাবিকদের মুক্তির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আকুল আবেদন জানান ও জিম্মি হয়ে থাকাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করেন।
জলদস্যুকবলিত বাংলাদেশের জাহাজ এম আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মেহেরুল করিম বলেন, জাহাজটি ছিনতাইকারী সোমালিয়ার সশস্ত্র জলদস্যুরা গতকাল পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। সাধারণতঃ জলদস্যুরা তাদের স্ট্র্যাটিজিক্যাল পয়েন্টে জাহাজকে নিয়ে গিয়ে তারপর নিজেরাই যোগাযোগ স্থাপন করে দাবি-দাওয়া জানায়। জাহাজটির গতকাল পর্যন্ত যে গতি দেখা গেছে, তাতে মনে হচ্ছে তারা তাদের উপকুলীয় অবস্থানে পৌঁছুতে আরো দু-তিনদিন সময় নিতে পারে। তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি। তারা যোগাযোগের চেষ্টা করলেই নাবিক-জাহাজ-পণ্যের নিরাপত্তায় কতাবার্তা শুরু করবো। এব্যাপারে আমরা আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছি।
গতকাল নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায় জলদস্যুরা ছিনতাই করা বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ-কে নিয়ে সোমালিয়া উপকূল বরাবরে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী জাহাজটির অবস্থান নিশ্চিত করে দেখতে পেয়েছে জাহাজটি খুবই ধীরে চালানো হচ্ছে। এই গতিতে চল্লে জাহাজটি হয়তো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিংবা শুক্রবার কোনো এক সময়ে সোমালিয়া উপকূলের কাছে পৌঁছাবে।
আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল সূত্র থেকে জানা যায়, আরব সাগর ও লোহিত সাগর এলাকায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা ১৯৯৫ সাল থেকে দস্যুতা শুরু করে। ২০০৫ সালে এদের কবলে পড়া একটি পেট্রোলিয়াম গ্যাস ট্যাংকার উদ্ধার করতে হংকং ভিত্তিক মালিককে ৩ লাখ ১৫ হাজার ডলার মুক্তিপণ দিতে হয়েছিলো। ২০০৮ সালে এক জাহাজের ক্যাপ্টেনকে ৪৭ দিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে জলদস্যুদেও দিতে হয়েছিলো ৬ লাখ ৭৮ হাজার ডলার। ২০১০ সালে আরব সাগরের গালফ অব এডেনে জলদস্যুকবলিত হয় একটি জার্মান জাহাজ, জিম্মি হয় ২২ জন নাবিক। ঐ জাহাজের দুই বাঙ্গালি কর্মকর্তাকে ৭ মাস পর মুক্ত করতে দিতে হয়েছে ৩৮ কোটি টাকার মুক্তিপণ। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে পর পর দু’টি ইরানি মাছ ধরার জাহাজও সোমালিয়ার দুর্ধর্ষ জলদস্যুকবলিত হয়েছে এই সমুদ্র এলাকায়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ