রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে নিহত গণমাধ্যমকর্মী এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হওয়া বৃষ্টি খাতুনের মরদেহ গতকাল সোমবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিআইডি জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে নিহতের বাবা সবুজ শেখ মরদেহ গ্রহণ করেন।
সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, গত ২৯ ফেব্রæয়ারি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু হওয়া অভিশ্রæতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের ডিএনএ তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার পরের দিন বার্ন ইনস্টিটিউটে নিহতের নাম বৃষ্টি খাতুন বলে মরদেহ সনাক্ত করেছিলেন তার বাবা সবুজ শেখ। তবে রমনা কালি মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা দাবি করেছিলেন, মৃতের নাম অভিশ্রæতি শাস্ত্রী। অভিশ্রæতি রমনা কালি মন্দিরে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন। এ বিষয়ে তিনি রমনা থানায় লিখিতভাবে দাবি করেন, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতের সঠিক পরিচয় জানার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এরপর আদালতের নির্দেশে মর্গ থেকে মরদেহের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় অভিশ্রæতি শাস্ত্রীই বৃষ্টি খাতুন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রবিবার রাতে রমনা কালি মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা আবারও লিখিতভাবে আবেদন করেন, তার কোন দাবি নাই। মরদেহ প্রকৃত স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। এরপর সোমবার দুপুরে বৃষ্টি খাতুনের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে সিআইডি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হিমঘর থেকে মেয়ের লাশ নিতে আসেন বৃষ্টি খাতুনের বাবা সবুজ শেখ। এসময় তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া যে, ১২ দিন পর হলেও নিজের মেয়ের মরদেহ বুঝে পেলাম। প্রশাসন, সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে আমার সন্তান আমার কাছে ফেরত দিয়েছে। ১২ দিন ধরে ঘুরছি। মেয়ের লাশ নিতে পারিনি। ঘুমবিহীন কেটেছে এই দিনগুলি। তার মা কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেছে। বোনেরা কান্না করছে। এই ভোগান্তিতে পরেছিলাম। সব তথ্য যাচাই বাছাই করে আমার সন্তানকে ফেরত পেয়েছি। সবুজ শেখ জানান, তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার খোকশা থানার বনগ্রামে। সেখানে ব্র্যাক স্কুল থেকে পাশ করে হাইস্কুলে ভর্তি হয় বৃষ্টি। গ্রাম থেকে এসএসসি ও কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। পরে ঢাকায় ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হয়। মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এতোদিন বৃষ্টি খাতুনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। অপেক্ষা করতে থাকেন স্বজনরা। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও যুক্তি-তর্ক আর শোকের ছায়া নেমে আসে। ভয়াবহ আগুনে একটি রুমে আটকা পড়ে বৃষ্টি খাতুন। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে করুণ মৃত্যু হয় তার। এমন করুণ মৃত্যুর পরও অন্তিম শয়ান নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এ যেন মরেও শান্তি নেই। তবে এই জটিলতার অবশান ঘটলো ১২ দিন পর।
এদিকে একই ঘটনায় নিহত নাজমুল নামে আরেকজনের লাশ এখনো পড়ে আছে মর্গে। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ায় তাকেও শনাক্ত করতে পারেনি পরিবার। তাই মৃত দেহ থেকে এবং লাশের দাবিদার স্বজনদের থেকে নেয়া হয় নমুনা। তবে সেই নমুনা এখনো ল্যাবে পরীক্ষারত অবস্থায় থাকায় নাজমুলের মরদেহ হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সিআইডি’র কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নাজমুল নামে মরদেহটির একটি পরিবার দাবিদার। তার মরদেহ থেকে নেয়া ডিএনএ নমুনাটি খুবই জটিল হওয়ায় এখনো পুরোপুরি মিলেনি। একটু সময় লাগবে।