ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সিবিডি) করতে চায়। তবে ডিএসসিসি এ পরিকল্পনা হাতে নেওয়ায় বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন সেখানে বসবাসরত প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা। মানুষকে উচ্ছেদ করে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রকল্প (সিবিডি) বাতিলের দাবিতে বাসিন্দার সমাবেশ করেছেন। গতকাল সোমবার পুরনো জন্মভ‚মি ও বাসস্থান রক্ষার দাবিতে কামরাঙ্গীরচর জন্মভ‚মি রক্ষা কমিটি ও বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্যোগে কামরাঙ্গীরচর কুড়ারঘাট হাসপাতাল মাঠে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এ প্রতিবাদ সভায় অংশ নেয়।
প্রতিবাদ সভায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলেন, কামরাঙ্গীরচর আমাদের বাপ-দাদার জন্মভ‚মি, আমাদের সারা জীবনের অর্জন, এটাই আমাদের ঠিকানা। উন্নয়নের নামে আমাদেরকে জন্মভ‚মি থেকে উচ্ছেদ করার প্রকল্প আমরা কিছুতেই বরদাশত করবো না। আমারা জীবন দিবো তবু জন্মভ‚মি কামরাঙ্গীরচর ছেড়ে অন্যত্র যাবো না।
তারা আরও বলেন, আমরা উন্নয়নের পক্ষে, তবে উন্নয়ন করতে হলে আমাদেরকে এখানে রেখে উন্নয়ন করতে হবে। ঢাকা সিটির অন্তর্ভুক্ত ঘনবসতি এ এলাকায় ১০৪ ফিট রাস্তার কোনো প্রয়োজন নেই। বিকল্প প্রস্তাবে ভিন্ন জায়গায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক আমাদের কোন আপত্তি নেই।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ৫৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুহাম্মাদ হুসাইন, কামরাঙ্গীরচর জন্মভ‚মি রক্ষা কমিটির সভাপতি ফারুক মেম্বার, সহসভাপতি ডা: সিরাজুল ইসলাম, হাজী সাবের উদ্দিন বাবুল, জামিয়া নুরিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এস এম রেজা, হাজী শাহ আলী, হাজী হানিফ দেওয়ান, হাজী সোহরাব হোসেন, খোরশেদ আমল খুশি, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, মো: সিরাজুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা মামুন আহমেদ, ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাদল, নাজমুল হাসন মিলন, জুম্মন হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং কামরাঙ্গীরচর জন্মভ‚মি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। কাউন্সিলর মোহাম্মদ হুসাইন বলেন, যদি কামরাঙ্গীরচরের এক ইঞ্চি মাটি এবং একটি ভিটাও উচ্ছেদ না করে উন্নয়ন করা হয় তাহলে আমরা এ উন্নয়নের সাথে আছি। আমাদেরকে উচ্ছেদ করে কোন কিছু করা হলে ২০ লক্ষ জনতা মিলে যেকোনো মুল্যে তা প্রতিহত করব।
মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, কামরাঙ্গীরচর এর মাটি রক্ষায় পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও হাফেজ্জী হুজুরের কামরাঙ্গীরচরকে রক্ষা করতে হবে।
ফারুক মেম্বার বলেন, ৪০০ বছরের বসতবাড়ি ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো না। যে উন্নয়নে আমরা থাকতে পারবো না সে উন্নয়ন আমরা চাই না। সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন, কামরাঙ্গীরচর রক্ষার যখন যেখান থেকে ডাক আসে আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। জীবন দিয়ে হলেও কামরাঙ্গীরচর রক্ষা করবেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা মছিল বের করে এবং কামরাঙ্গীরচরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।