প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির তরফ থেকে দেশে-বিদেশে বারবার লেখা হচ্ছে তাদের এত লোক অ্যারেস্ট। দেশে-বিদেশে নালিশ করছে। বিএনপির সব নাকি রাজবন্দি। যারা এভাবে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে তারা কী রাজবন্দি হয়? তারা তো সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, অপরাধী। রাজনৈতিক কারণে কেউ গ্রেফতার নেই। যারা গ্রেফতার আছে হয় হুকুমদাতা, না হয় সরাসরি অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত। হুকুমদাতা, অর্থ প্রদানকারী আর সরাসরি জড়িতদের কেউ রেহাই পাবে না। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। গতকাল মঙ্গলবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এবং দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত দিনের পর দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে, অগ্নিসন্ত্রাস করছে, পুড়িয়ে মানুষ মারছে। এ ধরনের অপরাধ যারা করে তাদের ক্ষমা করা যায় না। দলের এমপিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজ নিজ এলাকায় যারা এধরনের অপরাধ করেছে, যেসব মামলা চলছে, সেই মামলাগুলো যেন যথাযথভাবে চলে, সাক্ষী-সাবুদ যেন হয়, শাস্তি যেন তারা পায়।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এদের চরিত্র মানুষ খুন করা। লন্ডন থেকে হুকুম আসে। তারা এখানে আগুন দেয়, মানুষ খুন করে, আবার ছবিও পাঠাতে হয়। কী চমৎকার কথা! ভিডিও কনফারেন্সে হুকুম আসে। তারা তামিল করে। আগুন দিয়ে মানুষ মেরে, পুলিশ মেরে সেই ছবি পাঠায়। তাহলে তো আর সাক্ষী-সাবুদ কী দরকার। তারা নিজেরাই আলামত রেখে দিচ্ছে। একজন হাজার মাইল দূরে বসে হুকুম দেয়, আর তামিল যারা করে তাদের যে বিপদে ফেলা হয়-এটা কী বিএনপির নেতাকর্মীরা বুঝে না? তাদের কী আক্কেল নেই। আরেকজন বলছে, ছবি গোপনে দাও। ছবি না দিলে নাকি তাদের ক্রেডিট থাকে না নেতার কাছে। এ কেমন নেতা! দূরে নিজে নিরাপদে থেকে হুকুম চালায়। আর এরা জানিনা কী ধরনের কর্মী, মানুষ খুন করে। মানুষ খুন করলে এদের কেউ ছাড়বে না। সাধারণ মানুষকে বলবো এই সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে গাজায় যে ঘটনা ঘটাচ্ছে, বিএনপির যে চরিত্র যেভাবে তারা আক্রমণ করে; পুলিশকে আক্রমণ, হাসপাতালে আক্রমণ; ঠিক যেমন প্যালেস্টাইনের ওপর। হাসপাতালে বোম্বিং হচ্ছে। নারী-শিশুসহ তাদের মারা হচ্ছে, ওই একই চরিত্র। বিএনপি বাংলাদেশের জন্য আজরাইল হয়ে এসেছে। ওইদিকে ইসরায়েল করছে, এরা এখন বাংলাদেশের জন্য আজরাইল হয়ে এসেছে। তারা নির্বাচন করবে না, কারণ তারা জানে ভোট পাবে না, সমর্থন পাবে না। জনগণের উপর আস্থা নেই।
সংসদনেতা বলেন, সুষ্ঠুভাবে সংসদ চলবে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দেশে-বিদেশে নালিশ করে কোনো ফায়দা হবে না। বিদেশিরা কি বললো সেটা দিয়েও চলবে না। সব দেশের নির্বাচন আমাদের দেখা আছে। এবারের মতো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেশে আর হয়নি। নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলসহ তাদের জোট অংশ নেয়নি। তবে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী ছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল ৪৩৬ জন। এই নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নারী ও তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উলেখযোগ্য।
তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা ও দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজনীতি করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। ১৫ বছরে এটা প্রমাণ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সকলের সাথে সমন্বয় করে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবো। চলমান পরিকল্পনা দ্রুত শেষ করবো। পাশাপাশি দেশে যে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে, দ্রব্যমূল্য যাতে নিয়ন্ত্রণ হয় তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রমজানে দ্রব্যমূল্য যাতে সহনশীল থাকে। এখানে একটা অদ্ভুত ব্যাপার দাম বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়, মজুত করা হয়। সেগুলো লক্ষ্য রেখেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিদেশি ঋণ ও সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। কেউ আমাদের এখানে এসে বললো, আমরা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়বো না। আমরা বিবেচনা করে নেবো। সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা রফতানি বহুমুখীকরণ করবো। আমরা প্রতিটি অ্যাম্বাসিকে নির্দেশ দিয়েছি এখনকার ডিপ্লোম্যাসি হবে ইকোনমিক্যাল ডিপলোমেসি।
’৭৫ পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর প্রতিটি নির্বাচন আমরা দেখেছি। সেই হ্যাঁ/না ভোট। নির্বাচন কমিশনে তালা দিয়ে ভোটের রেজাল্টই নেই। তিন-চারদিন পর রেজাল্ট। আমাদের বিরোধী দলীয় নেতা (জিএম কাদের) দেখালেন; কিন্তু ২য়, ৩য় ও ৪র্থ নির্বাচনের রেজাল্ট দেখাননি। ২য় নির্বাচন কীভাবে করেছিল। ৩য় নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেতার ভাই (এরশাদ) তখন আরেক মিলিটারি ডিকটেটর ক্ষমতায়। এক মিলিটারি ডিকটেটর ভোট চুরির রাস্তা দেখিয়ে গেল, ক্ষমতার দখলটা দেখিয়ে গেলো, তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরেকজন। দুজনেরই একই খেলা। সেনাপ্রধান হলেন। একদিন ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে গেলেন। একই সঙ্গে দুই রূপ। রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে ভোট চুরি। খুশি হতাম বিরোধী দলীয় নেতা যদি তার ভাইয়ের ১৯৮৮-এর নির্বাচনটা দেখাতেন। সেই নির্বাচনটা ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি। এরশাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলো খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে। অবশ্য তিনি দেখিয়েছেন ২১ শতাংশ ভোট। সেদিন তো কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। হোন্ডা-গুণ্ডা দিয়ে নির্বাচন ঠান্ডা। এরশাদের নির্বাচন টেকেনি। খালেদা জিয়ার নির্বাচনও টেকেনি। জনগণের রুদ্ররোষে ভোট চুরির অপরাধে বিদায় নিতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অধিবেশনের সমাপনী সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই অধিবেশনে ২২ কার্যদিবসের মধ্য দিয়ে শেষ হলো।