ভবন তৈরিতে অনিয়মের কারণে রাজধানীর বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ নামের ভবনটিতে ২০১৯ সালে অভিযান চালিয়েছিল রাজউক। সে সময় ওই ভবনের অননুমোদিত অংশ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করায় ওই ভবনকে নোটিস দেওয়া হয়েছিল, পরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। ওই ভবনটি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়নি। এছাড়া তারা কিছু আনঅথোরাইজড কনস্ট্রাকশন করেছিল। এ কারণে আমরা অভিযান চালিয়ে ওই অংশটুকু ভেঙে দিই।
বৃহস্পতিবার রাতে সাত তলা ওই ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরো অন্তত এক ডজন মানুষ। এদিকে রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উৎপল বড়–য়া বলেন, রিমান্ডে আমরা চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আমরা মূলত কর্তৃব্যে অবহেলায় দায়িদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এই ঘটনার সঙ্গে যাদের অবহেলা পাওয়া যাবে তাদেরই আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ওই ভবনটিতে অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটিতে অগ্নিনির্গমন পথ ছিল না। ভবনের সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডারসহ নানা ধরনের মালামাল রাখা ছিল। ফলে নিচতলায় যখন আগুন লাগল, ওই সিঁড়ি ব্যবহার করে নামতে পারেনি মানুষ। উপরে আটকা পড়ে ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় অধিকাংশের মৃত্যু হয়। আর রাজউক জানিয়েছে, ভবনটিতে অফিস করার অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। রেস্তোরাঁ করার জন্য নয়। অথচ গ্রিন কোজির বিভিন্ন ফ্লোরে গোটা দশেক রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান ছিল। নিচতলার একটি জুসের দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
রাজউক জানিয়েছে, ২০১১ সালে গ্রিন কোজি কটেজ বেইজমেন্টসহ আট তলার অনুমোদন নেওয়া হয়। আবাসিক কাম বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া ওই ভবনটির নিচ তলা থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক এবং উপরের অংশ আবাসিক ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। ভবনের কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে। রাজউকের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই ওই ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এ কারণে ভবন মালিককে ২০১৯ সালে নোটিস দেওয়া হয়। ওই বছরের ২৬ ফেব্রæয়ারি অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ভবনের কিছু অংশ ভেঙে দেয় রাজউক।
ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো ভবন নির্মাণ করা হলে সেটি ব্যবহার বা বসবাসের আগে ব্যবহার সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে হয়। একটি ভবন সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কি-না, ভবনটি ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কি-না, সেটি নিশ্চিত করার জন্যই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট বা ব্যবহার সনদ।