রাজধানীর ঢাকার বেইলি রোড। ব্যস্ততম এই শহরের নাগরিকদের জন্য এক ভালো লাগা কিংবা সুন্দর সময় কাটানোর স্থান। বড় শপিং সেন্টার, রেস্টুরেন্টের সমারোহ এই এলাকায়। সময় পেলে কিংবা ছুটি নিয়ে সেখানে সপ্তাহে অন্তত একবার ঢু মারেন অনেকে। কিন্তু প্রাণোচ্ছল সেই জায়গাই এতটা ভয়াবহ হবে, কে জানত? বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে এমনই এক ভবনে ঘটেছে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা। এতে সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। তারা সবাই গিয়েছিল আনন্দ করতে, অথচ ফিরতে হলো লাশ হয়ে। এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও ১২ জন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপ্রধান শুক্রবার এক শোকবার্তায় আগুনে প্রাণ হারানোদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আহতদের দ্রæত সুস্থতা কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আগুনে পুড়ে প্রাণ হারানোদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
গ্রিন কোজি কটেজ নামে সাততলা এই ভবনটিতে ছিল নামকরা বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। রাত ১০টার ঠিক আগে ভবনটির নিচতলায় ‘চুমুক’ নামে একটি জুসের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনটিতে। ব্যস্ততম এলাকায় ওই ভবনে ছিল না কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা। জরুরি অবস্থায় বের হওয়ারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আগুনে পুড়ে যত না মানুষ মারা গেছে, তার চেয়েও বেশি মারা গেছে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে। তিনতলায় ছিল কাপড়ের দোকান। বাকি সব ছিল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। এমনকি সিঁড়িতেও রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। যে কারণে আগুনের তীব্রতা ছড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘সাত তলা এই ভবনে সিঁড়ি মাত্র একটি। তবে ভবনটিতে ওঠানামার জন্য সবাই লিফট ব্যবহার করে থাকেন। সিঁড়িটি বরং যেন সিলিন্ডারের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। নেই জরুরি বহির্গমন পথও। আমরা তদন্ত করে দেখছি, ভবনটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ ভবনে মাত্র একটি সিঁড়ি। আমাদের কাছে ভবনটিকে মনে হয়েছে অনেকটা আগুনের চুল্লির মতো।
আগুনের সূত্রপাত যেভাবে : ভবনটিতে প্রথমে ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্ট থেকে আগুন ছড়ানোর খবর পাওয়া গেলেও নিচের একটি দোকান থেকে আগুন ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ আলম। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধদের দেখতে যাওয়ার পর র্যাবের ডিজি গতকাল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নিচের একটি ছোট দোকানে প্রথমে আগুন লেগেছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। তবে পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরোধে মারা গেছেন।’
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, ‘এই ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তদন্ত করলে সঠিক কারণ বলা যাবে। আমাদের প্রাথমিক ধারণা হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।’
ভবনজুড়ে ছড়ানো-ছিটানো সিলিন্ডার : সাত তলা ভবন। অধিকাংশ তলাতেই রেস্তোরাঁ। রয়েছে একটি মোবাইলের শোরুম, একটি পোশাকের শোরুমও। ভবনটিতে যেসব রেস্তোরাঁর অবস্থান, তার সবগুলোই জনপ্রিয় ব্যান্ড। কাচ্চি ভাই, খানা’স, বার্নওয়েল, ওয়াফল অ্যান্ড জুস বার, ফুওকো হটের মতো খাবারের দোকান। সঙ্গে পোশাকের অভিজাত ব্যান্ড ইল্লিয়িন আর গ্যাজেটস অ্যান্ড গিয়ারের শোরুম।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন বলেন, দ্বিতীয় তলা ছাড়া ভবনটির প্রতিটি তলায় সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। এটা খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার। কারণ এরকম একটা জায়গায় আগুন লাগলে একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। হয়েছেও তাই। গ্যাস সিলিন্ডারগুলোর কারণে আগুন দ্রæত ছড়িয়েছে এবং দাউদাউ করে জ্বলেছে। প্রায় সব তলাতেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
বেঁচে ফেরারা যা জানালেন : ‘আগুন লাগার পর দৌঁড়ে আমরা ওপরে যাই। ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের লোকজন ছাদে উঠার চেষ্টা করেন। ৭ তলা ভবনের পুরোটা আগুনের ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল অনেকের। অনেকে ওই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাঁচার জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেন। অনেকে গøাস ভেঙ্গে গ্রিল ধরে নামেন। অনেকে লাফ দেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন বেইলি রোডের বাণিজ্যিক ভবনের অগ্নিকান্ড থেকে বেঁচে ফেরা দু’জন। তারা দুজনই ওই ভবনের ভিন্ন দুটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন।
নিচতলায় অবস্থিত ‘মেজবানি খানা’ নামে রেস্টুরেন্টের কর্মী কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা প্রথমে একটা শব্দ পেয়ে বাইরের দিকে তাকাই। তখন গেটের সামনে আগুন দেখতে পাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের ধোঁয়া পুরো বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে যায়। আমরা আর গেট দিয়ে বের হতে পারি নাই। তখন আমরা যারা রেস্টুরেন্টে ছিলাম তারা ওপরের দিকে উঠে যাই। কিন্তু সিঁড়িতে ৫ তলা পর্যন্ত উঠে আটকে যাই। আগে থেকেই অনেক লোক সেখানে অবস্থান করছিল। ওপরে আর উঠতে পারি নাই লোকের কারণে। ওই ফ্লোরে একটা রেস্টুরেন্টে আছে, আমরা কিছু মানুষ তখন সেখানে আশ্রয় নেই। ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় যায়৷ যে যার মতো এদিক-ওদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে থাকে। যতটুকু দেখেছি অনেকে এই ধোঁয়ার কারণে হাঁটতে পারছিল না। এই ধোঁয়া বের হওয়ার মতো কোনও ব্যবস্থা নাই। ওই ফ্লোরের রেস্টুরেন্টের কিচেনে একটু ফাঁকা ছিল, ওইটা দিয়ে আমি নিচে লাফ দেই। তারপর আর আমার কোনও হুঁশ ছিল না।
ভবন থেকে বের হওয়ার জরুরি কোনও সিঁড়ি ছিল না জানিয়ে কামরুল বলেন, আমি ওইখানে ১ বছর ধরে কাজ করি। লিফট আর সিঁড়ি ছাড়া বিল্ডিং থেকে নামার অন্য কোনও ব্যবস্থা দেখি নাই। কাঁচে ঘেরা বদ্ধ ভবনে বাতাস আসা-যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না জানিয়ে ওই ভবনের তিন তলায় অবস্থিত ‘খানাস রেস্টুরেন্টে’র কর্মী জুবায়ের বলেন, ঘটনার সময় আমি খাবার তৈরির কাজ করছিলাম। পরে আমাদের ক্যাশিয়ার এসে বলে নিচে আগুন লাগছে। সবাই ওপরে আসেন। আমি বের হয়ে নিচে নামার জন্য গেলে দেখি সবাই ওপরেই উঠতেছে। নিচ থেকে সিঁড়ি দিয়া কালো ধোঁয়া ওপরেই আসতাছে। দৌঁড়াইয়া ছাদে যাই। সেইখান থেকে অনেকের দেখা দেখি আমিও ছাদ থেকে লাফ দেই। তারপর আর কিছু মনে নাই। আমারে হাসপাতালে নিয়া আসে।
‘লাফ না দিলে আমিও হয়তো পুড়ে কয়লা হতাম’ : কেবলমাত্র খাবার অর্ডার করে বসেছি। হঠাৎ চিৎকার, চেঁচামেচি। ধোঁয়া দেখি। একটু পর বিকট শব্দ। বেরিয়ে দেখি নিচে আগুন। ওপরে উঠে যাই। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চারদিকে অন্ধকার আর প্রচন্ড ধোঁয়া। মানুষের ছোটাছুটির মধ্যে দেখি অনেকে পুড়ছিল। অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি অনেককে। নিজে বাঁচার অনেক চেষ্টা করি। ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরের জানালা দিয়ে কার্নিশ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ি। এরপর আমাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদ আমিন।
আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া একজন বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ছাত্র আমিন। আগুন ধরার পরের পরিস্থিতি নিয়ে এ যুবক বলেন, ‘অনেকবার চেষ্টা করি লাফ দিতে; পারিনি, কিন্তু পেছনে অনেকের বাঁচার আকুতি ও পুড়তে থাকা দেখে বেঁচে ফেরার চিন্তায় গত রাতে লাফ দিয়েছিলাম। নইলে আমিও হয়তো পুড়ে কয়লা হতাম মিনহাজ ভাইয়ের মতো।’
ঢাকা মেডিকেলের সামনে আহাজারি : ‘আমার ছেলেটা তো ভালোই ছিল। ও কেন হাসপাতালে? আমাকে ওরে একবার দেখতে দেও। আমি মিনহাজরে নিয়ে বাসায় যাব। তোমরা আমাকে বল মিনহাজের কী হয়েছে।’ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের সামনে মা আমেনা বেগমের এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর যেন জানা নেই স্বজনদের। রাজধানীর বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার রাতে লাগা আগুনে প্রাণ হারান মিনহাজ উদ্দিন। একই অফিসের সহকর্মী আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘মিনহাজরা তিন ভাই। রাজধানীর বাসাবোতে বড় ভাই মেহেদীর বাসায় থাকত সে। পড়াশুনা শেষ করে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে বছরখানেক ধরে চাকরি করছিল ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মিনহাজ।’
বন্ধু সৌমিত আহমেদ অরণ্য বলেন, ‘গতকাল রাতে ছোট ভাই আমিন, মিনহাজসহ কয়েকজন রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম। আমিন আর মিনহাজ ছিল উপরে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে। আমার মা বাড়ি যাবে এ জন্য আমি আরেক বন্ধু মেহেদি হাসান রিফাতকে নিয়ে শ্যামলী যাই। আমিন ফোন করে জানায় যে, সে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরের পাশ দিয়ে ওপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েছে। উপরে মিনহাজ।’ অরণ্য বলেন, ‘একাধিকবার আমরা মিনহাজের মোবাইল ফোনে কল করেছি কিন্তু কল রিসিভ হয়নি। সারা রাত ধরে মিনহাজকে খোঁজ করেছি হাসপাতালে খুঁজেছি৷ সর্বশেষ হাতের ঘড়ি দেখে মিনহাজের মরদেহ শনাক্ত করা হয়।’
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস : গ্রিন কোজি কটেজের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারও দায় থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, এই ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আমরা দেখতে চাই- এখানে কারও গাফিলতি আছে কি না, এই ভবনের ফায়ার সেফটি সম্পর্কিত বিষয়গুলোর অনুমোদন আছে কি না। এ ছাড়া অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়, এই ভবনটি সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে কি না। আমরা সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে দেখব, এখানে কারও গাফিলতি আছে কি না।
ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভবনটিকে ৩ বার নোটিশ দেওয়া হয় : গ্রিন কোজি কটেজের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিবেচনায় এই ভবনটিকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ডিজি ফায়ার সার্ভিনের ডিজি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই ভবনে কোনো অগ্নি নিরাপত্তার পরিকল্পনা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ভবনের প্রবেশের জন্য একটি সিড়ি রয়েছে। অর্থাৎ ভবনে চলাচলের একটিই পথ ছিল। ভবনের চার তলায় গ্যাসের সিলিন্ডার দেখতে পেয়েছি, সেখানে এখনো সিলিন্ডার আছে, সেখানে গেলে আপনারাও সিলিন্ডার দেখতে পাবেন।’
কাচ্চি ভাইয়ের ব্যবস্থাপক যা বললেন : ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে আগুনের সূত্রপাত দ্বিতীয় তলার কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ থেকে হয়নি বলে দাবি করেছেন রেস্তোরাঁটির ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম। গতকাল ঘটনাস্থলের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত নিচ তলার চুমুক রেস্টুরেন্ট থেকে। আমি নিজে দেখেছি সেখান থেকেই প্রথমে আগুনের ধোঁয়া বেরুচ্ছে। মিডিয়ায় দেখলাম যে, কাচ্চি ভাই থেকে এই করছে, হেই করছে। কাচ্চি ভাইয়ের ওখানে আপনারা উঠে দেখুন এখনো কাচ্চি ভাইয়ের কিচেন যেটা পেছনে, সেই কিচেন ঠিক আছে। আগুনের চিহ্ন পাবেন না। আগুন লাগছে সামনে। তাহলে কাচ্চি ভাইয়ের কিচেন থেকে আগুন কীভাবে লাগল আপনারা বলেন?
কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ থেকে আগুন লাগার খবর সঠিক নয় দাবি করে হালিম বলেন, আগুনের সূত্রপাত নিচ থেকে। আমি মনে করি পুলিশসহ যারা এখন তদন্ত করছে তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এটা সঠিক প্রচার নয়। এটা শুধু শুধু হয়রানি করা। আমি মিডিয়ার ভাইদের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ রাখব যে আপনারা সত্যটা উদঘাটন করেন কিন্তু অতি উৎসাহী হয়ে কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা কইরেন না, প্লিজ।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি : বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। তিনি ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক। এই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে মো. ছালেহ উদ্দিনকে। তিনি সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক। কমিটির অপর তিন সদস্য হলেন, সংশ্লিষ্ট জোনের ডিএডি, সিনিয়র স্টেশন অফিসার এবং ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর।
নিহত-আহতদের পরিচয় : ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২), পপি রায় (৩৬), সম্পনা পোদ্দার (১১), আশরাফুল ইসলাম আসিফ (২৫), নাজিয়া আক্তার (৩১), আরহাম মোস্তফা আহামেদ (৬), নুরুল ইসলাম (৩২), সম্পা সাহা (৪৬), শান্ত হোসেন (২৪), মায়শা কবির মাহি (২১), মেহেরা কবির দোলা (২৯), জান্নাতি তাজরিন নিকিতা (২৩), লুৎফুর নাহার করিম (৫০), মোহাম্মদ জিহাদ (২২), কামরুল হাসান (২০), দিদারুল হক (২৩), অ্যাড. আতাউর রহমান শামীম (৬৫), মেহেদী হাসান (২৭), নুসরাত জাহান শিমু (১৯), সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা (১৬), সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৮), স্বপ্না আক্তার (৪০), সৈয়দ মোবারক কাউসার (৪৮), সৈয়দা আমেনা আক্তার নুর (১৩), জারিন তাসনিম প্রিয়তি (২০), জুলেল গাজী (৩০), প্রিয়াংকা রায় (১৮), রুবি রায় (৪৮), তুষার হাওলাদার (২৩), কে এম মিনহাজ উদ্দিন (২৫), সাগর (২৪), তানজিলা নওরিন (৩৫), শিপন (২১), আলিসা (১৩), নাহিয়ান আমিন (১৯), সংকল্প সান (৮), লামিশা ইসলাম (২০), মো. নাঈম (১৮), অভিশ্রæতি শাস্ত্রী (২৫) ও আসিফ (২৫)।
বার্ন ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি যারা : বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন, ফয়সাল আহমেদ (৩৮), সুজন মন্ডল (২৪), প্রহিত (২৫), আবিনা (২৩), রাকিব হাসান (২৮), কাজী নাওশাদ হাসান আনান (২০), আজাদ আবরার (২৪), মেহেদী হাসান (৩৫), রাকিব (২৫) ও সুমাইয়া (৩১)। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ইকবাল হোসেন (২৪) ও যোবায়ের (২১)। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হেদায়েতুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৪৬টি মৃতদেহের মধ্যে ৪১টি শনাক্ত হয়েছে। ৩৮ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।