spot_img

পড়ে রইল ভিসা-পাসপোর্ট

ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার। দেশে এসেছিলেন স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ইতালি নিয়ে যাবেন। ভিসা-পাসপোর্ট প্রস্তুত। সহসাই তাদের দেশ ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু বেইলী রোডের আগুনে পুড়ে শেষ তাদের সেই স্বপ্ন। এই ঘটনায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। শোকাহত পরিবারটিকে সান্ত¡না দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মগবাজার নিজ বাসা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাচ্চি ভাই নামক রেস্টুরেন্টে যান মোবারক। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন- স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা কাশফিয়া ও সৈয়দা নূর এবং একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। আকস্মিক আগুনে পুড়ে সবাই মারা যান। মুহূর্তে পরিবারটি শেষ হয়ে যায়।
নিহতের পারিবারের সদস্যরা জানান, শাহবাজপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার (৪২) দীর্ঘদিন ইতালিতে ব্যবসা করতেন। মাসখানেক আগে ইতালি থেকে দেশে এসেছিলেন। ইতালিতে স্থায়ীভাবে (গ্রিন কার্ড) থাকার সুযোগ পেয়েছেন। স¤প্রতি স্ত্রী ও তিন সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভিসাও হয়ে গিয়েছিল সবার। কিন্তু ইতালি আর যাওয়া হলো না তাদের।
নিহত কাউছারের মা হেলেনা বেগম জানান, সবাইকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে গেছে মোবারক। সঙ্গে ছিল স্ত্রী স্বপ্না, দুই মেয়ে সৈয়দা কাশফি ও সৈয়দা নূর এবং একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। আগুনে পুড়ে সবাই মারা গেছেন। এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করে এই নারী বলেন, আমাদের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
নিহত গৃহবধূ স্বপ্নার বড় বোন পলি আক্তার বলেন, ছোট বোন, বোনের স্বামী সন্তানসহ পরিবারের সবাই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে তারা মোবাইলে কল করে আহাজারি করছিলেন বাঁচার জন্য। আমরা তাদের বাঁচাতে পারিনি।
একসঙ্গে ৩ বোনের মৃত্যু : ‘শুক্রবার (গতকাল) রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আগের দিন গেলো শপিং করতে ও তাদের এক আন্টির সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে আর ফেরেনি আমার দুই মা। যাওয়ার আগে বলেছিল, বাবা আমরা তাড়াতাড়ি ফিরবো।’ এ কথা বলে কেঁদে ওঠেন বাবা কোরবান আলী।
তার মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে মারা গেছেন।
জানা গেছে, বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে দুজন হলেন রিয়া ও আলিশা। তারা কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকার হাজী কোরবান আলীর মেয়ে। ফৌজিয়া আফরিন রিয়া মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর সাদিয়া আফরিন আলিশা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
একই ঘটনায় মারা গেছে, তাদের খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। তিনি সদর উপজেলার হাতিগড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। তারা একই সঙ্গে শপিং করতে গিয়েছিলেন। ফাঁকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে ঢোকেন।
নিহতদের বাবা কোরবান আলী বলেন, ‘ফেব্রæয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা এলাকায় এসেছিল। কয়েকদিন বাড়িতে থেকে চলে গেছে। শুক্রবার রাতে আমিসহ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কেটেছিল। কিন্তু গত রাতেই মারা গেছে। নিমুও তাদের খালাতো বোন। একই সঙ্গে গিয়ে আর ফেরেনি। আমার ঘর আনন্দে ভরে থাকতো। আজ আমার ঘর শূন্য।’
মারা গেলেন বুয়েট শিক্ষার্থী লামিসা, পুলিশ কর্মকর্তা বাবা নির্বাক : শুক্রবার দুপুর ১২টা। ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী মহল্লার একতলা বাড়ি স্বর্ণলতার সামনে টানানো হয়েছে লাল-নীল শামিয়ানা। এর নিচে ফ্রিজিং ভ্যানে রাখা একটি লাশ। আশপাশে অনেকটা ভিড়। প্লাস্টিকের একটি চেয়ারে বসে ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নাসিরুল ইসলাম। তিনি নিশ্চুপ। তাকে ঘিরে আরও অনেকেই বসে ছিলেন। তারাও নিশ্চুপ।
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনের অগ্নিকান্ডে যে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন, তাদের একজন নাসিরুল ইসলামের বড় মেয়ে লামিসা ইসলাম । বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন লামিসা। নাসিরুল ইসলামের দুই কন্যার মধ্যে বড় ছিলেন লামিসা। ২০১৮ সালে অসুস্থতার কারণে তার স্ত্রী মারা যান। এর পর থেকে দুই সন্তানকে একাই লালন করছিলেন তিনি।
দক্ষিণ ঝিলটুলী মহল্লার বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘ওরা দুইটা বোন খুবই চুপচাপ থাকত। ওদের মা ২০১৮ সালে মারা যাওয়ার পর ওদের বাবা পরম আদরে একাই ওদের বড় করেছেন। স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়াবে। সে স্বপ্নও বাস্তবায়ন হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, আল্লাহ মেয়েটাকে নিয়ে গেল।’

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ